1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদ্বেষ ছড়িয়ে আছে আমার দেশেও

৫ জুন ২০২০

বিদ্বেষের কত রূপ৷ কখনও বর্ণ, কখনও ভাষা, কখনও ধর্ম, জাত, এলাকার মধ্যে দিয়ে তা ফুটে বেরোয়৷ পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, সারা ভারতেও৷

https://p.dw.com/p/3dIl5
Indien Mumbai Dalit Proteste
ছবি: Reuters/S. Andrade

বর্ণবাদ দেখতে অ্যামেরিকার দিকে তাকাতে হবে কেন, হাতের কাছেই কলকাতার কাগজে পাত্রপাত্রী বিজ্ঞাপন থাকতে? সেখানে পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনের ওপর একটু চোখ বোলান৷ দেখবেন, প্রায় সকলের দাবি, ফর্সা ও সুন্দরী পাত্রী৷তার মানে, কালো মেয়ের প্রবেশ নিষেধ৷রবি ঠাকুর যতই কৃষ্ণকলির ‘কালো হরিণ চোখের’ জয়গান করুন, তারাশঙ্করের কবি যতই গান বাঁধুন, ‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে’, এ সব সাহিত্যে ঠিক আছে৷ লেকচার দেওয়ার সময়ও চমৎকার৷ কিন্তু আম বাঙালির মনে ও প্রাণের গভীরে ঢুকে গিয়েছে সাদা চামড়ার প্রতি আদি, অকৃত্রিম টান৷

পরে কলকাতা থেকে দিল্লি এসে দেখেছি, ভৌগলিক দূরত্ব বাড়লেও মনোভাবের পরিবর্তন নেই৷ উত্তর ভারত বা যাকে আমরা চলতি কথায় গো-বলয় বলি, সেখানে তো মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই অপরাধ, তার ওপরে আবার কালো হলে তো কথাই নেই৷ অনাদর ও বৈষম্য শুরু হয়ে যাবে গোড়া থেকেই৷ যারা ফর্সা, তারাও ভয়ে রোদে বের হতে চায় না৷ পাছে রঙ কালো হয়ে যায়৷ ইংরেজ রাজত্ব গিয়েছে, থেকে গিয়েছে সাদা চামড়ার প্রতি বর্ণবাদী আকর্ষণ৷ 

অথচ দেখুন, এই গো-বলয়ে সবচেয়ে উপাস্য দুই দেবতা রাম ও কৃষ্ণ, দুজনেই কালো৷ পশ্চিমবঙ্গেও তো বাঙালির দেবী মা কালী কালো৷ অথচ, নিজেদের সংসারে শুধু ফর্সার কদর৷ কালো মেয়ে এলে গঞ্জনা৷ তাই বর্ণবিদ্বেষ দেখতে অ্যামেরিকার দিকে নয়, নিজেদের দিকে তাকানোই যথেষ্ট৷ 

Goutam Hore
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলেছবি: privat

আর বর্ণবিদ্বেষের বর্ণটা বাদ দিয়ে বিদ্বেষের দিকে তাকালে তো মহাভারত লিখতে হয়৷কলকাতায় আমরা যখন বড় হচ্ছি, তখন ঘটি-বাঙাল হলো হট টপিক৷ ঘটি মানে যাঁরা আদতে পশ্চিমবঙ্গের লোক৷ আর বাঙাল হলো যাঁদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশ থেকে দেশভাগ বা তারপরে চলে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে৷ বাঙালের প্রতি ঘটির এবং ঘটির প্রতি বাঙালের মনোভাব শুধু ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানকে সমর্থনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যেত না৷ এই বিদ্বেষের ঝলক মাঝে মধ্যেই টের পাওয়া যেত নানা মন্তব্যে৷তবে এখন সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই মনোভাব অনেকটাই বদলেছে৷

কিন্তু তাই বলে কি অন্য সব মনোভাব বদলেছে­? বড় দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বদলায়নি৷ এখনও উত্তর প্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, রাজস্থানের লোকেদের প্রতি হামেশাই বাঙালিরা যে বাক্যবন্ধ ব্যবহার করেন, তা খুব গৌরবজনক নয়৷ বরং তার মধ্যে বিদ্বেষের গন্ধ প্রবল হয়ে ওঠে৷ যেমন মেদিনীপুরের লোকেদের প্রতি কলকাত্তাইয়ারা এমন বিশেষণ ব্যবহার করেন যা তাঁদের খুব এতটা গৌরবান্বিত করে না৷ বরং তার মধ্যে থেকে বিদ্বেষের মনোভাবটা লুকানো যায় না৷

কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে যতদিন ছিলাম, ততদিন অন্তত কেউ আমার জাত জিজ্ঞাসা করেননি৷ সেই প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে উত্তর ভারতে৷ তখন কম্পিউটার ছিলো না৷ সেল ফোনও নয়৷ সাংবাদিকতার জন্য বাইরে গেলে ফ্যাক্স করে কপি পাঠাতে হতো৷ রাজস্থানের জয়পুরে কপি নিয়ে ফ্যাক্স করার জন্য দাঁড়িয়ে আছি৷ সেই ফ্যাক্স অপারেটর জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জাত? পরে গো-বলয়ে অনেক বার এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে৷জাত কি? তা সেই জাতের নামে বিদ্বেষ তো কম দেখেনি ভারত৷

দলিত, আদিবাসীরা যখন শুধু জাতের প্রশ্নে অত্যাচারিত হন, রোহিত ভেমুলাকে আত্মহত্যা করতে হয়, তখন? আমায় তো জাতের কারণে হেনস্থা হতে হয়নি, কিন্তু যাঁদের হতে হচ্ছে এবং যাঁরা সেটা করছেন? সাদা-কালোর বর্ণবিদ্বেষ অমার্জনীয়, অন্যায়, অসভ্য মানসিকতার প্রকাশ৷ আর এই জাতিবদ্বেষ? মানুষকে মানুষ বলে মনে না করাও একইরকম অন্যায়, অমার্জনীয়, অসভ্য৷ সেখান থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারছি কোথায়?

কিছুদিন আগে দিল্লিতে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিলো৷ পশ্চিম দিল্লির সেই দাঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে মনে হয়েছিলো, এ তো যুদ্ধক্ষেত্রর ছবি৷পোড়া বাড়ি থেকে ধোঁয়া উঠছে৷রাস্তায় স্তূপাকার করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে গাড়ি, স্কুটার, মোটর সাইকেল, ভ্যান৷পিচের রাস্তার ওপর পড়ে আছে শুধু ইটের টুকরো৷ সেরকমই একটি পোড়া বাড়ির আঙিনার মধ্যে ঢুকে দেখেছিলাম, একটি আহত কুকুর চুপ করে শুয়ে আছে৷ উঠোনে ছড়িয়ে কয়েকটা সবজি৷ রান্নার প্রস্তুতি চলছিলো৷সেই সময় দাঙ্গাকারীরা আসে৷ পালিয়ে যেতে হয় বাড়ির বাসিন্দাদের৷ তারপর উন্মত্ত মানুষের তাণ্ডবে পুড়ে যায় ঘর-গেরস্থালি৷শুধু ধর্মের কারণে বিদ্বেষ? এ কোন বিদ্বেষ যা অন্য মানুষের সর্বনাশ করার জন্য লোককে প্রবৃত্ত করায়? এ কোন বিদ্বেষ যা শুধু ধ্বংস করায়?

এক কৃষ্ণাঙ্গকে শ্বাসরোধ করে মারে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ৷ কোথায়? বিশ্বের সব চেয়ে ধনবান, সভ্য বলে দাবি করা দেশে৷ আর আমরা যখন নিজেদের দিকে তাকাই, তখন অন্দরের ছবি দেখে উৎসাহিত হতে পারি না৷বিদ্বেষের ঘেরাটোপের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়৷

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান