বিতর্কিত আইনে হংকংয়ে গ্রেফতার চার ছাত্র
৩০ জুলাই ২০২০হংকংয়ে নতুন নিরাপত্তা আইন নিয়ে গোটা বিশ্ব সরগরম। হংকংয়ের নাগরিক থেকে শুরু করে অ্যামেরিকা, ইউরোপ-- সকলেরই বক্তব্য চীন যে নতুন আইন চাপিয়ে দিয়েছে হংকংয়ের মানুষের উপরে তা কেবল অগণতান্ত্রিক নয়, মানবতা বিরোধী। বৃহস্পতিবার রাতে সেই আইনে চারজনকে গ্রেফতার করল চীনের পুলিশ। অভিযুক্ত সকলেই ছাত্র। বয়স ১৬ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। পুলিশের অভিযোগ, ফেসবুকে হংকংয়ের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন ওই ছাত্ররা। তারই জেরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী এ ধরনের কার্যকলাপ এখন হংকংয়েসম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ছাত্রদের ল্যাপটপ, ফোন সহ বহু ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
হংকংয়ের স্বাধীনতাকামী ছাত্রদের একটি দল এই গ্রেফতারের পরে জানিয়েছে অভিযুক্ত টনি চাং তাদের দলের প্রাক্তন নেতা। বেজিং নিরাপত্তা আইন ঘোষণা করার পরে তাদের দলটি কার্যকলাপ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ নতুন আইন অনুযায়ী, বিচ্ছিন্নতা, বাইরের দেশের সঙ্গে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে যোগাযোগ রাখা অপরাধ বলে গণ্য হবে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গত কয়েক দিন ধরে টনি এবং তাঁর অন্য সহযোগীদের নজরে রাখছিল পুলিশ। তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন, কী লিখছেন, কাদের সঙ্গে দেখা করছেন-- সবই খোঁজ রাখা হচ্ছিল। তারই সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ টনিকে তাঁর বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়। বাকি তিনজনকেও কাছাকাছি সময়ে পুলিশ আটক করে। আটক সকলেই জুন মাস পর্যন্ত হংকংয়ের স্বাধীনতা চেয়ে আন্দোলন করেছেন।
বস্তুত, গোটা ২০১৯ সাল জুড়েই হংকংয়ে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। ২০২০ সালের গোড়ায় সেই আন্দোলন আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে, চীন পুলিশ এবং প্যারামিলিটারি দিয়েও তা দমন করতে পারেনি। এরপরেই গত জুন মাসে নতুন আইনের কথা জানায় বেজিং। নতুন নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী এ ধরনের আন্দোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ফলে আন্দোলনরত প্রতিটি দলই সাময়িক ভাবে কার্যকলাপ স্থগিত রাখে।
আন্দোলনকারীদের একাংশের বক্তব্য, এ বার আর হংকংয়ে বসে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। দেশের বাইরে গিয়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে হবে। কিন্তু চীনের বক্তব্য, বিদেশে বসে যদি কোনও হংকংয়ের নাগরিক আন্দোলন চালানোর চেষ্টা করেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নিয়মও নতুন আইনে আছে। ফলে কোনও ভাবেই আন্দোলন নতুন করে শুরু করা যাবে না।
চীনের এই নতুন আইন নিয়ে গোটা বিশ্ব জুড়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজনীতিবিদ থেকে কূটনীতিবিদ-- অনেকেরই বক্তব্য, এই আইন মানবতা বিরোধী, অগণতান্ত্রিক এবং মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী। যদিও চীন এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, এই আইন মানুষের অধিকার খর্ব করছে না। দেশের বিরুদ্ধে কেউ যাতে ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেটুকুই নিশ্চিত করা হয়েছে এই আইনের মাধ্যমে।
যুক্তরাজ্যের হাত থেকে হংকং চীনের কাছে গেলেও দীর্ঘ দিন ধরে সেখানকার মানুষ বহু স্বাধীনতা পেয়েছেন। চীনের শাসনে থাকলেও বিশেষ অধিকার ছিল তাদের। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নতুন নিরাপত্তা আইন হংকংয়ের সেই বিশেষ অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এএফপি)