বিচারের মুখোমুখি তুর্কি সংবাদপত্র
২৪ জুলাই ২০১৭বড় ধরনের সাজা পেতে যাচ্ছেন জুমহুরিয়েতের সংবাদকর্মীরা৷ সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই মামলায় অভিযুক্তরা সাড়ে সাত বছর থেকে শুরু করে ৪৩ বছরের কারাদণ্ড পেতে পারেন৷ তবে ঠিক কী অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্দে, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা আনাদলু জানিয়েছে, পত্রিকাটির ১৭ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি গোষ্ঠিকে সমর্থনের' অভিযোগ আনা হয়েছে৷ ফেতুল্লাহ গুলেনের সমর্থকদের সহায়তা এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি-পিকেকের সাথে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে৷
তবে ঠিক কী প্রমাণের ভিত্তিতে এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে, কী ধরনের সমর্থনের অভিযোগ আনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি আনাদলু৷
জুমহুরিয়েতের সাংবাদিক আহমেত সিক গত বছর ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার হন৷ তার টুইটার অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন পোস্টের সূত্র ধরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস৷
আনাদলু জানিয়েছিল, টুইটার পোস্ট এবং দৈনিক জুমহুরিয়েতে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে সিক ‘তুরস্ক প্রজাতন্ত্র এবং এর বিচার ব্যবস্থা, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীকে' হেয় করেছেন৷ ‘একটি জঙ্গি সংগঠনের' হয়ে প্রপাগান্ডা ছড়ানোরও অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে৷
কী করেছিলেন আহমেত সিক?
আহমেত সিক মূলত সরকারের বিভিন্ন প্রপাগান্ডায় নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ উদাহরণস্বরূপ, তুরস্কে রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভের ঘটনাটিই ধরা যাক৷ ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর এক পুলিশ সদস্য কারলভকে গুলি করে হত্যা করে৷ সরকার বলেছিল, সেই হত্যাকারী ছিল ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারী৷
সিক টিউটারে প্রশ্ন তুলেছিলেন, হত্যাকারী যে একজন পুলিশ সদস্য ছিলেন, সে বিষয়টি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে সরকার৷
অভিনেতা, পরিচালক ও রাজনীতিবিদ সিরি সুরেয়া ওন্দারকে গ্রেপ্তার করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন সিক৷ পার্লামেন্টে কুর্দিপন্থি বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিনিধিত্ব করতেন ওন্দার৷ সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী ইয়ালসিন আকদোগানের সাথে মিলে তিনি কুর্দি সংকট সমাধানে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন৷ ওন্দারকে তারপর গ্রেপ্তার করা হয় জঙ্গি সংগঠনকে সমর্থনের অভিযোগে৷
২০১১ সালে এক বছরের জন্য কারাগারে ছিলেন সিক৷ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থায় ফেতুল্লাহ গুলেনের প্রভাব নিয়ে সমালোচনা ছিল তার তখনকার অপরাধ৷ পার্থক্য হলো, তখন ফেতুল্লাহ গুলেন এবং প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান ছিলেন সবচেয়ে ভালো বন্ধু৷
‘মিথ্যাবাদী সরকার'
অভিযুক্তদের মধ্যে জুমহুরিয়েতের প্রধান সম্পাদক মুরাত সাবুনজু এবং জার্মানিতে নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধান সম্পাদক জান দুনদারও রয়েছেন৷ অভিযোগে বলা হয়েছে দুনদার সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পত্রিকাটির অবস্থান পালটেছে৷ তখন থেকে জুমহুরিয়েত ‘জঙ্গি সংগঠনকে' সমর্থন দিয়েছে আসছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে৷
দুনদার এরই মধ্যে অপর একটি মামলায় পাঁচ বছর দশ মাসের সাজা পেয়েছেন৷ দুনদার এবং পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক এরদেম গুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়৷
তুরস্ক থেকে সিরিয়া যাওয়ার পথে ট্রাকে তল্লাশি চলছে, ২০১৫ সালের মে মাসে এমন একটি ছবি প্রকাশ করে জুমহুরিয়েত৷ ত্রাণ সরবরাহের আড়ালে এইসব ট্রাকে সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছিল৷ তুরস্কের সরকার এর আগে এমন সব অভিযোগ নাকচ করে আসছিল৷ তবে ছবিটি তা মিথ্যা বলে প্রমাণ করে৷ ‘এই সেই অস্ত্র, এর্দোয়ানযার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না' শিরোনামে ছাপানো হয়েছিল ছবিটি৷
ভয়ডরহীন সাংবাদিকতা
দুনদার ও গুলের বিরুদ্ধে মামলার সমালোচনা ছিল বিশ্বজুড়ে৷ এখনও জুমহুরিয়েতের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া পুরোপুরি শুরু হয়নি৷ কিন্তু এরই মধ্যে সাড়া ফেলতে শুরু করেছে এই মামলা৷রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারসের মুক্ত সাংবাদিকতা সংক্রান্ত র্যাংকিংয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে তুরস্কের অবস্থা ১৫১ নম্বরে৷
চাপের মুখেও ভয়হীন সাংবাদিকতার জন্য ২০১৬ সালে রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড পায় জুমহুরিয়েত৷ ‘বিকল্প নোবেল প্রাইজ' হিসেবেও পরিচিতি আছে এই অ্যাওয়ার্ডের৷
ক্যার্স্টেন ক্নিপ/এডিকে