অভিশংসন বিল পাশ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর, স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী তা সংসদ সদস্যদের আলোচনার জন্য উন্মুক্ত করেন৷ রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন৷ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা আলোচনায় বিলটি জনমত জরিপ এবং অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেন৷ এছাড়া সাতটি সংশোধনী প্রস্তাবও তোলা হয়৷ সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়৷ এরপর সেয়া ১১টার দিকে বিভক্তি ভোটে ষোড়শ সংশোধনী বিল পাশ হয়৷ বিলটির পক্ষে ৩২৭ এবং বিপক্ষে শূন্য ভোট পড়ে৷
বিল পাশের সময় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন৷ তাছাড়াও ছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ৷
নতুন আইনের ৯৬ অনুচ্ছেদের (১) দফায় বলা হয়েছে, এ অনুচ্ছেদের বিধানাবলী সাপেক্ষে কোনো বিচারক ৬৭ বত্সর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন৷ (২) দফায় বলা হয়েছে, প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থের কারণে মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতিত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না৷(৩) দফায় বলা হয়েছে, এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসাদাচরণ বা অসামর্থের সম্পর্কে তদন্ত সংসদে আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবেন৷ (৪) দফায় বলা হয়েছে, কোনো বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন৷
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এর বিধান অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং তাদের পক্ষে এ ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে৷
এর আগে নতুন এই আইনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ ওঠে তাহলেই কি তাঁকে অপসারণ করা হবে? তা নয়৷ এর জন্য ফলো-আপ আইন হবে৷ ঐ আইনে তদন্ত কমিটির বিধান থাকবে৷ সংশ্লিষ্ট, দায়িত্বশীল, প্রাসঙ্গিক লোকদের দিয়ে করা হবে৷ তাঁরা সংসদে বিষয়টি পাঠালে সংসদ শুধু অনুমোদন দেবে৷ অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির৷ তিনিই নিয়োগ দেন, সরাবেনও তিনি৷''
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেন, জনগণের অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতেই এই আইন৷ তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে বিচারপতিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ ছিল না৷ কিন্তু নতুন আইনে সব কিছু হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে৷ সংসদ প্রমাণিত অভিযোগের পর শুধু অপসারণের অনুমোদ দেবে৷ আর সংসদের আইন দ্বারা তদন্ত কমিটি গুরুতর অভিযোগের তদন্ত করবে৷’’
গত ১৮ই আগস্ট মন্ত্রিসভা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল অনুমোদন করে৷ ৭ই সেপ্টেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন৷ উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বিলটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান হয়৷ বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি৷ তারও আগে ২রা সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় থেকে সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় বিলটি পাঠানো হয়৷
১৯৭২-এর সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল৷ ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়৷ পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে ১৯৭৮ সালে সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল-এর বিধান করা হয়৷ সর্বশেষ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা আবারো সংসদের কাছে ফিরে গেল৷
তবে নতুন এই আইন নিয়ে দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের ভিন্নমত আছে৷ আইনটি পাশ করার আগে তাঁরা আরো ব্যাপক আলাপ-আলোচনার তাগিদ দিয়েছিলেন৷