সংসদে অভিশংসন বিল
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪রবিবার আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর পরই তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়৷ সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে৷
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একজন বিচারক ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন৷ প্রমাণিত অসদাচরণ বা অযোগ্যতার কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশে কোনো বিচারককে অপসারণ করা যাবে৷ বিচারকের অসদাচরণ বা অযোগ্যতার সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবে৷ এছাড়া কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে পদত্যাগ করতে পারবেন৷
বাহাত্তরের সংবিধানে বিচারপতিদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ৬২ বছর৷ সংশোধনীতে তা ৬৭ বছর করা হয়েছে৷ তবে বিচারকদের অভিশংসন পদ্ধতি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হওয়ার কথা বলা হলেও সেই আইন এখনো করা হয়নি৷
বিলটি পাস হলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছাড়াও মহাহিসাব নিরীক্ষক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্যসহ অন্যান্য সাংবিধানিক পদের ব্যক্তিদের অপসারণের ক্ষমতাও সংসদের কাছে ন্যস্ত হবে৷ প্রচলিত আইনে বিচারপতিদের অপসারণ বা অভিশংসনের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে৷ সাধারণত, রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে প্রধান বিচারপতি এই কাউন্সিল গঠন করেন৷
‘বিচারকদের স্বাধীনতা এক বিন্দুও ক্ষুণ্ণ হবে না'
রবিবার বিলটি উত্থাপনের আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিচারপতিদের রায়ের সাথে অভিশংসনের কোনো সম্পর্ক নেই৷ রায়ের জন্য তাঁরা অভিশংসনের মুখোমুখি হবেন না৷ সংসদ কর্তৃক অভিশংসন ব্যবস্থায় বিচারকদের স্বাধীনতা এক বিন্দুও ক্ষুণ্ণ হবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘কেবল বড় ধরনের অসদাচরণ ও অযোগ্যতার অভিযোগ প্রমাণিত হলেই বিচারপতিগণ অভিশংসনের সম্মুখীন হবেন; অন্য কোনো কারণে নয়৷ অভিশংসনের যাতে অপব্যবহার না হয় আইনটি সেভাবেই প্রণীত হবে৷''
‘দেশে ন্যায়বিচার বলে কিছু থাকবে না'
অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা উচ্চ আদালতের কাছ থেকে সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হলে দেশে ন্যায়বিচার বলে কিছু থাকবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সংসদে জনগণের প্রতিনিধি নেই৷ ১৫৪ জন নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়৷ বাকিরা শতকরা ৫ ভাগ ভোটও পায়নি৷ এই সংসদ অবৈধ৷ এরকম একটা সংসদের কাছে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হলে, তা হবে একটি বিশেষ দলের সিদ্ধান্ত৷''
ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথায়, ‘‘আমরা বলতে চাই, এ রকম বিল আমরা সমর্থন করতে পারি না৷ জনগণও এই বিল সমর্থন করবে না৷''