বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে, শামিল দীপিকাও
৮ জানুয়ারি ২০২০শুরু হয়েছিল দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে, দ্রুত তা কর্ণাটকে ছড়ায়৷ এরপর সারা ভারত জুড়ে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি৷ এখন ভারতের ছোট, মাঝারি, বড় সব শহরেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছে ছাত্ররা৷ একেবারে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে৷ আন্দোলনের ঘোষিত কোনও নেতা নেই৷ কোনও দল বা সংগঠনের একার প্রতিবাদও নয়৷ ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন৷ এনআরসি, সিএএ, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ফি বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন প্রতিবাদ শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে সংবিধান রক্ষার লড়াই৷ এটাই মোদী সরকার তথা বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দঁড়িয়েছে৷৷ চিন্তার আরও একটি কারণ আছে৷ পুরো আন্দোলনটা হয়েছে জাতীয় পতাকা হাতে এবং সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে৷ ফলে হিন্দুত্বপন্থী জাতীয়তাবাদের পাল্টা একটা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়েছে৷ সেখানে ক্রমশ এমন সব ব্যক্তিত্ব যোগ দিচ্ছেন, যা আগে ভাবা যেত না৷ যেমন বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন৷ মঙ্গলবার রাতে জেএনইউতে গিয়ে তিনি বিক্ষোভে সামিল হন৷ ঐশীর সঙ্গে কথা হয় তাঁর৷ সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গেও দেখা হয়েছে দীপিকার৷
শুধু তো দীপিকা নন৷ মুম্বইয়ের প্রতিবাদেও সামিল হয়েছিল বলিউড৷ মহারাষ্ট্র টাইমসের প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল চাওকে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''মুম্বইয়ের বিক্ষোভে অনুরাগ কাশ্যপ, তাপসী পান্নু শামিল হয়েছিলেন৷ শুধু তাঁরাই নন, দেবেন্দ্র ফড়নবিসের আমলে উদারবাদী চিন্তাধারার লোকেরা চুপ করে গিয়েছিলেন৷ সরকার বদলের পর তাঁরা এ বার দলে দলে যোগ দিয়েছেন বিক্ষোভে৷ একেবারে নিজের থেকে তাঁরা এসেছেন৷'' এভাবেই চেন্নাই, বাঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ সহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে৷
বিক্ষোভের এই চরিত্র চমকে দিচ্ছে বাম নেতাদেরও৷ সিপিআই-এর সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট সদস্য পল্লব সেনগুপ্ত যেমন ডয়চে ভেলেকে বলছেন, ''বামপন্থী ছাত্র সংগঠন দেশের কটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে? দশ-বারোটা হবে৷ কিন্তু প্রতিবাদ দেশের সর্বত্র হচ্ছে৷ সেটাও সংবিধানর রক্ষার শপথ নিয়ে৷ আর জেএনইউ এর বিরুদ্ধে মোদী সরকার ও বিজেপির রোষের কারণ, ওখানে প্রথম থেকেই মুক্তচিন্তা প্রাধান্য পেয়েছে, যা বিজেপির কাছে বিপজ্জনক৷ সবথেকে বড় কথা, ছয় বা সাতের দশেকর পর এই প্রথম সারা দেশ জুড়ে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে নেমেছে৷''
কারণ আলাদা হতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্র নিজেদের মতো করে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে৷ যেমন বুধবার ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ভারত বনধ৷ যার প্রভাব দেশের বিভিন্ন রাজ্য়ে পড়েছে৷ ট্রেন চলাচল ব্যহত৷ অনেক রাজ্যে ব্যাঙ্ক বন্ধ৷
ঘটনা হল, এই ধরনের আন্দোলন প্রথমে খুব প্রবল হয়ে কিছুদিনের মধ্য়ে স্তিমিত হয়ে পড়ে৷ এ বারও কি তাই হবে? বাম নেতারা বলছেন, হবে না৷ কারণ,আন্দোলনটা শুধু ছাত্রদের মধ্য়ে সীমীত নয়৷ রাজনৈতিক দল ও সাধারণ লোকও অংশ নিচ্ছেন৷ বিশেষ করে উদারবাদী চিন্তাধারার লোকেরা৷ পল্লব সেনগুপ্ত যেমন বলছেন, ''ছাত্র-যুবরা ভারতের সংবিধান রক্ষার জন্য আন্দোলনে নেমেছেন৷ তাই তা স্তিমিত হবে না৷''
দীপিকা জেএনইউতে এসে বিক্ষোভে সামিল হওয়ার প্রতিক্রিয়া বিজেপি-কেও প্রবল অস্বস্তিতে ফেলেছে। দীপিকার ফ্যানের সংখ্যা এতটই বেশি যে তাঁদের ঘাবড়ে যাওয়া স্বাভাবিক৷ বিজেপি পাল্টা প্রচার শুরু করেছে, দীপিকার সিনেমা বয়কট করতে হবে৷ বিশেষ করে আগামী শুক্রবার অ্যাসিড আক্রান্তদের ওপর দীপিকার সিনেমা 'ছাপাক' বয়কটের ডাক দিয়েছে বিজেপি। তাদের এই প্রচারের পাল্টা প্রচারে নেমেছে অন্যরা৷
বিজেপির সামনে সব থেকে বড় প্রশ্ন, কীভাবে ভারতজোড়া এই আন্দোলন থামবে বা স্তিমিত হবে? পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বিরোধীদের হাতে কোনও কাজ নেই, তাই এ সব করছে। সাধারণ মানুষ তাঁদের সঙ্গে নেই৷
সপ্তাহ তিনেক ধরে আন্দোলন, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ক্রমশ ছড়িয়েছে৷ দিল্লির শাহিনবাগে লোকে সারারাত ধরে রাস্তায় থাকছেন৷ কলকাতার পার্ক সার্কাসেও শুরু হয়েছে রাত জেগে প্রতিবাদ৷ অভিনব চরিত্রের জন্য প্রতিবাদ আরও বৈচিত্র পাচ্ছে৷ ভবিষ্যতে এই আন্দোলন কী রূপ নেবে, স্তিমিত হয়ে পড়বে কি না, তার দিকেই তাকিয়ে পুরো দেশ৷