বিক্ষোভের এক হাজার দিনে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ চাকরিপ্রার্থীদের
তারা শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় পাস করেছেন। চাকরি পাননি। এক হাজার দিন ধরে তারা রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ
তার নাম রাসমণি। নবম থেকে দ্বাদশ স্রেণির শিক্ষক হওয়ার জন্য মেধাতালিকায় তার নাম আছে। কিন্তু চাকরি পাননি। গত এক হাজার দিন ধরে তার দিনের অধিকাংশ সময় কেটেছে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়ে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লাভ হয়নি। অঢেল প্রতিস্রুতি পেয়েছেন, চাকরি নয়। তাই শনিবার কলকাতায় প্রতিবাদমঞ্চে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ জানালেন রাসমণি।
জামা খুলে প্রতিবাদ
রামমণি মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ জানালেন। আর পুরুষ চাকরিপ্রার্থীরা জামা খুলে খালি গায়ে প্রতিবাদ জানান। যদি তাদের এই প্রতিবাদ সরকার ও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যদি তারা তাদের ন্যায্য চাকরি পান, সেজন্য এইভাবে প্রতিবাদ।
কী বলছেন রাসমণি?
রাসমণির আবেদন, ‘‘রাজনীতির ঊর্পরে উঠে আপনারা সবাই আমাদের সমস্যার সমাধান করুন...। কেউ শুনতে পাচ্ছেন? আমাদের চাকরি দিন।’’ রাসমণি বলেচেন, ''আমরা চাকরির পরীক্ষায় পাস করেছি। কিন্তু তারপরেও রাস্তায় বসে আছি। আমাদের কী দোষ? আমরা কেন ন্য়য্য চাকরি পাব না?''
'মুখ্যমন্ত্রী পারেন জট কাটাতে''
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ''যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না। অযোগ্যরা চাকরি করছেন। এই জট কাটানোর ক্ষমতা কেবলমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই রয়েছে।'' মুখ্যমন্ত্রী আগে এই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও কিছু হয়নি।
বঞ্চনার অভিযোগ
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ''২০১৬ সালের এসএলএস-টির নম্বরভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সামনের সারির মেধাকে বঞ্চিত করে পিছনের সারির প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে।'' তারা বলছেন, অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি করছেন, আর তারা এক হাজার দিন ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাদের কথা কেউ শুনছেন না। এটা কী ধরনের বিচার?
প্রতিশ্রুতি ও অনশন চলছে
এর আগে ২০১৯ সালে ২৯ দিন অনশন করেছিলেন ওই চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও তাঁরা চাকরি পাননি— এই অভিযোগে আবার অনশনে বসেন কয়েকশো যুবক-যুবতী।
আশায় বাঁচা
২০২১ সালে সল্টলেকে ১৮৭ দিন ধর্না দেন। তার পর গত ১০০০ দিবারাত্রি কেটেছে রাস্তায়। কিন্তু চাকরি হয়নি। চাকরি তাদের কাছে এখন মায়ার মতো। তবু আশায় বুক বেঁধে তারা বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন।
কান্নায় ভেঙে পড়ে
কান্নায় ভেঙে পড়া অবস্থায় অনেক চাকরিপ্রার্থীরই আবেদন ছিল, অবিলম্বে তাদের নিয়োগ করা হোক। তাদের কথা শুনুক রাজ্য সরকার। দিনের পর দিন এভাবে প্রতিবাদ জানানোর একটা ভয়ংকর চাপও আছে। তা সত্ত্বেও তারা প্রতিবাদ চালিয়ে গেছেন।
সমর্থন বামেদের
গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ এক হাজার দিনে পড়ায় তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন বামেরা। বিমান বসু-সহ বাম নেতারা মিছিল করে এসে এই আন্দোলনকে আবার সমর্থন জানান।
প্রতিবাদমঞ্চে তৃণমূল নেতা
বিকেলে ওই মঞ্চে উপস্থিত হন কুণাল। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় হুলস্থুল পরিস্থিতি। চাকরিপ্রার্থী, বিরোধী নেতৃত্ব এবং পুলিশের ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে যান তৃণমূল নেতা কুণাল। বেশ কিছুক্ষণ তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ চলে। তারদিকে একপাটি চটিও উড়ে আসে।
স্লোগানের মধ্যে
ধর্ণামঞ্চে মাথা মুড়োনোর খবর পেয়ে ওই নারীকে দেখতে শাসকদলের তরফে কুণাল ঘোষ ধর্নামঞ্চে উপস্থিত হতেই উঠল ‘চোর-চোর’ স্লোগান। কুণাল তারই মাঝে রাসমণিকে বুকে টেনে নেন।
আলোচনার প্রস্তাব
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলের অন্যতম মুখপাত্রের দিকে এক পাটি জুতোও উড়ে এল। যদিও তার পরেও কুণাল দেখা করলেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আলোচনা থেকেই সমাধানের পথ আসে। গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন করার অধিকার সকলের রয়েছে।’’
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের মধ্যস্থতায় ঠিক হয়েছে, এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং তাঁর দফতরের আধিকারিকেরা। সেই বৈঠকে কুণালও থাকবেন।
বিতর্ক চলছে
শাসকদলের তরফে কুণালের উপস্থিতি এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলার পর খুশি চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। অন্য দিকে, কুণালের উপস্থিতি প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবি কৌস্তুভ বাগচী কটাক্ষ করেন, “চাকর বাকর নয়, চাকরিপ্রার্থীরা মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চায়”। কয়েকমাস আগে কৌস্তুভ নিজের গ্রেফতারির প্রতিবাদে মাথা মুড়িয়েছিলেন।
'আর প্রতিশ্রুতি নয়'
কিন্তু সেই বৈঠকের আগে শনিবার বাড়ি ফেরার সময়ে মাথার চুল কামিয়ে ফেলা চাকরিপ্রার্থী রাসমণি পাত্র বললেন, ‘‘সোমবার আমরা কোনও প্রতিশ্রুতি শুনে ফিরতে চাই না। ওই দিনই আমাদের নিয়োগ দিতে হবে।’’ ওপরের ছবিটি রাসমণির মাথা মুড়ানোর আগের ছবি।