1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপির মতো আওয়ামী লীগেরও ‘জজ মিয়া' থাকতেই হবে!

৩০ অক্টোবর ২০১৫

দুই বিদেশি হত্যা রহস্যের জট খুলতে খুলতেও খুলছেনা৷ বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য জন্ম দিয়েছে বিএনপি আমলের ‘জজ মিয়া নাটক'-এর মতো কোনো সাজানো নাটকের আশঙ্কা৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও চলছে এই নিয়ে বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/1Gx8O
Symbolbild Mord Ehrenmord Messer
ছবি: bilderbox

ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে এক ‘বড় ভাই'য়ের নির্দেশে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে৷ এক পর্যায়ে কথিত ‘বড় ভাই' হিসেবে উঠে আসে বিএনপি নেতা, কমিশনার কাইয়ুমের নাম৷ সরকারী দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ‘বড় ভাইয়ের বড় ভাই' তারেক জিয়াকে গ্রেপ্তারের দাবিও তোলেন৷ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদও এমন দাবি তুলেছেন ৷ হাছান মাহমুদের মতে, ‘‘সব ভাইয়ের আবার একজন বড় ভাই আছেন, যিনি সমুদ্রের ওপারে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন৷ তিনি হলেন বড় ভাইদের বড় ভাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ .... বড় ভাইদের ধরতে হবে৷ তাহলেই এ ধরনের গুপ্ত হত্যা বন্ধ করা সম্ভব হবে৷''

কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একটি বক্তব্য ‘বড় ভাই' এবং ‘বড় ভাইয়ের বড় ভাই' নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবসানের আশা জাগিয়েছিল৷ দু দিন আগেই একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘‘কাইয়ুমই এখানকার বড় ভাই৷''

চ্যানেলটিকে তিনি এ বলেও আশ্বস্ত করেন যে, ‘‘আমরা আপনাদেরকে এই বলে নিশ্চিত করতে চাই যে জজমিয়া নাটকের মতো কোনোকিছু আমাদের নেত্রী বিশ্বাস করেনা, আমরাও বিশ্বাস করিনা৷''

বিএনপিতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়৷ বৃহস্পতিবার বিএনপির সিনিয়র নেতা নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘কেউ ব্যক্তিগতভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়ালে বিএনপি তার দায় নেবেনা৷ ''

কিন্তু সেদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি পত্রিকার প্রতিবেদনের উল্লেখ করে নিজের আগের বক্তব্য থেকে সরে এসে বলেন, ‘‘যুগান্তর পত্রিকা একজনের নাম প্রকাশ করেছে, আমি বলেছি, সে (কাইয়ুম) সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, আমরা তাকেও সন্দেহ করছি ৷'' সংবাদমাধ্যমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর ৭ খুনের আসামি নূর হোসেনের এক সহযোগীকে গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করেও পরে তা অস্বীকার করেছিলেন৷

তাবেলা হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য অনেকের মনেই আরেকটি ‘জজমিয়া নাটক'-এর আশঙ্কা জোরালো করেছে৷ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ এক গ্রেনেড হামলা হয়৷ হামলায় আওয়ামী লীগের তখনকার মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন৷ আহত হন শতাধিক৷ অল্পের জন্য রক্ষা পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট৷ গ্রেনেড হামলা মামলার মূল আসামি করা হয় এক ‘জজ মিয়া'কে৷ তবে সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে প্রকৃত তথ্য৷ জানা যায়, জজ মিয়া কোনো সন্ত্রাসী নন, তিনি একজন সাধারণ বাস কন্ডাক্টর, ভয় এবং প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে

এরপর থেকে বাংলাদেশে কোনো হত্যার ঘটনা ঘটলেই সবার মনে ফিরে আসে ‘জজ মিয়া নাটক'-এর সেই স্মৃতি৷ এবারও ফিরেছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেউ কেউ লিখছেন দুই বিদেশি হত্যার ঘটনাতেও জজ মিয়ার মতো কোনো নাটক সাজানো হতে পারে৷

সরকার সমর্থক কিংবা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীলরা এর জবাব দিচ্ছেন অন্যভাবে৷ একজন লিখেছেন, ‘‘বিএনপি নেতারা আজকাল জজ মিয়া নাটকের রেফারেন্স খুব টানছেন৷ তাও ভালো, এতদিনে ওনারা স্বীকার করলেন যে জজ মিয়া নাটক ছিল!''

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যায়, ভুল বা অপকর্মের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়ার দৃষ্টান্ত খুব বিরল৷ বরং যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, তাদের সমালোচনা হলে তার জবাবে অতীতের সরকারের আরো বড় ভুল, অন্যায় বা অপকর্মের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়৷ সেই সুরেই টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘‘সম্পূরক প্রশ্নঃ বিএনপির যদি জজ মিয়া থাকতে পারে আওয়ামী লীগের থাকবে না কেন?''

সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: জাহিদুল হক

আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য