পানি দিবস
২২ মার্চ ২০১২বর্তমানে আমাদের পৃথিবীতে সাত বিলিয়ন মানুষের বাস৷ আরো দুই বিলিয়ন মানুষ এই বিশাল জনস্রোতে যোগ দেবে ২০৫০ সাল নাগাদ৷ পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৪ লিটার পানি পান করে৷ তবে আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি পান করি তার বেশিরভাগ অংশই খাদ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ যেমন পশু পালন এবং খামারের কাজ মিলিয়ে প্রতি এক কেজি গরুর মাংস উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ১৫,০০০ লিটার পানি, অপর দিকে এক কেজি গম উৎপাদনে খরচ হয় ১,৫০০ লিটার পানি৷ জাতিসংঘের পানি বিষয়ক ক্যাম্পেইন'এর ওয়েবসাইটে এধরনের বেশ কিছু তথ্য যোগ করা হয়েছে৷
পৃথিবীতে বর্তমানে যখন দীর্ঘ মেয়াদী খাদ্যাভাব রয়েছে এবং যেখানে পানির সংকট ক্রমশ দানা বাঁধছে, সেখানে এই ইস্যুটিকে আর ‘অন্যের সমস্যা' হিসেবে আখ্যা দিয়ে পাড় পাওয়ার সুযোগ নেই৷ জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সবার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি পানির অপচয় প্রতিরোধেও উদ্যোগী হতে হবে৷ স্বাভাবিকভাবেই জাতিসংঘ চাইছে বিশেষ কিছু উদ্যোগের বাস্তবায়ন, যা পরিস্থিতি বদলাতে পারে৷ আর এই লক্ষ্য পুরণে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত এবং টেকসই খাদ্যাভাস, একইসঙ্গে কম পানি খরচায় তৈরি পণ্য ব্যবহার৷
বর্তমানে খাদ্যের যে অপচয় করা হয় তাও রোধ করতে হবে ব্যাপক হারে৷ এই মুহূর্তে বিশ্বে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপন্ন হয় তার ৩০ শতাংশই অপচয় হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরি৷ তাই বিশ্বব্যাপী সুপেয় পানি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে একটি বৈশ্বিক পানি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালুর পক্ষে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রসোঁয়া ফিঁয়৷
মার্সেইয়ে সদ্য সমাপ্ত পানি সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘একটি বৈশ্বিক পানি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে৷ এটি হবে বৈশ্বিক পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যবস্থার একটি অংশ৷ এটিকে অবশ্যই অনেক বেশি শক্তিশালী এবং প্রাঞ্জল হতে হবে৷''
অবশ্য ফরাসি প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের বিরোধিতাও করেছেন কেউ কেউ৷ এদেরই একজন ম্যাগি হোয়াইট৷ নব্বইটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জোট বাটারফ্লাই এফেক্ট'এর এই মুখপাত্র মনে করেন, সংকট নিরসনে আঞ্চলিক উদ্যোগ বেশি প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, ‘‘সত্যিকার অর্থে আমাদের আসলে আরেকটি বড় বৈশ্বিক কাঠামোর প্রয়োজন নেই৷ আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে আঞ্চলিক এবং জাতীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা৷ কেননা, সিদ্ধান্তগুলো আঞ্চলিক পর্যায়েই নেওয়া হয়৷ আর্থিক সাহায্যও এই পর্যায়ের মাধ্যমেই যাচ্ছে৷ সুতরাং আমাদেরকে কাজ করতে হবে আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে৷ তাই আরেকটি মূল বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্ভবত সঠিক সমাধান নয়৷''
উল্লেখ্য, বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ বাণী দিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান৷ এছাড়া দিনটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারতে একাধিক সেমিনার এবং শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ