আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস.এইচ কাপাডিয়ার নেতৃত্বে তিন বিচারকের এক বেঞ্চ আজ বিতর্কিত আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে রায় দেন, প্রকল্পের সময়-ভিত্তিক সফল রূপায়নে কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারের একযোগে কাজ করা দরকার৷ এজন্য এক উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়৷ কমিটিতে থাকবেন, জলসম্পদ, পরিবেশ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ চারজন বিশেষজ্ঞ৷
২০০২ সালে দেশে তীব্র খরা পরিস্থিতির সময়ে আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের কথা মাথায় আসে এনডিএ সরকারের আমলে৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী এজন্য গঠন করেন এক টাস্কফোর্স৷ টাস্কফোর্সের রিপোর্টে দেশের নদীগুলিকে ভাগ করা হয় দুভাগে৷ একটি দাক্ষিণাত্যের নদীভাগ অন্যটি হিমালয় থেকে উৎসারিত নদী৷ দাক্ষিণাত্যের নদীগুলিকে যুক্ত করা হবে ১৬টি সংযোগকারী খাল দিয়ে৷ যারমধ্যে আছে মহানদী, গোদাবরি, কৃষ্ণা ও কাবেরী ইত্যাদি৷
হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদীগুলিকে যুক্ত করা হবে ১৪টি সংযোগকারী খালের মাধ্যমে৷ যেমন, কোশি-ঘাগরা, ঘাগরা-যমুনা, ফরাক্কা-সুন্দরবন, ব্রহ্মপুত্র-গঙ্গা, সুবর্ণরেখা-মহানদী, গঙ্গা-দামোদর-সুবর্ণরেখা ইত্যাদি৷
টাস্কফোর্সের পূর্বানুমান অনুসারে এরফলে দেশের ১৬লাখ হেক্টর জমিতে সেচের সুবিধা হবে যেখানে সবরকম ফসল ফলানো সম্ভব হবে৷ খরচ ধরা হয়েছিল পাঁচ লাখ কোটি টাকা৷কিন্তু বিভিন্ন মতবিরোধে প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি৷ রিপোর্ট পড়ে থাকে হিমঘরে৷
আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প সম্পর্কে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তথা নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সুভাষ সাঁতরা ডয়চে ভেলেকে প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যার কথা বললেন, প্রথমে অনুমান করা হয়েছিল হিমালয় থেকে নামা নদীগুলিতে বর্ষার পর জল উদ্বৃত্ত থাকবে এবং সেটা সংযোগকারী খাল কেটে প্রবাহিত করা হবে দক্ষিণের বৃষ্টি-নির্ভর নদীগুলিতে৷ কিন্তু বর্ষার পর উদ্বৃত্ত জল থাকছেনা বাঁধ নির্মাণের জন্য এবং উজানে বিভিন্ন কাজে বাড়তি জল টেনে নেয়ার ফলে৷ দ্বিতীয়ত, একটা নদীর অববাহিকা থেকে জল অন্য নদীতে প্রবাহিত করলে তার সঙ্গে চলে যায় পলিমাটি ও বর্জ্য পদার্থ৷ তৃতীয়ত, সংযোগের জন্য যে-পরিমাণ জমি লাগবে তাতে বনভূমির অপূরণীয় ক্ষতি হবে৷ চতুর্থত, আন্ত:রাষ্ট্রীয় নদীগুলির ক্ষেত্রে যে-সব চুক্তি আছে সেগুলি লঙ্ঘিত হবে ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক ৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক