বার্সেলোনায় হামলা: মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক
২০ আগস্ট ২০১৭শনিবার রিপোলে ঐ ইমামের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ ইমাম আব্দেলবাকি এস সাটি অবশ্য জুনে রিপোল মসজিদে ইমামের দায়িত্ব ছেড়ে অন্যত্র চলে যান৷ মসজিদের বর্তমান ইমাম জানিয়েছেন, সাটি পরিচিতদের জানিয়েছিলেন যে তিন মাসের জন্য মরক্কোতে নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি৷ তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, ঐ ইমাম সন্দেহভাজন হামলাকারীদের হামলা চালাতে প্রভাবিত করেছিলেন৷ তবে পুলিশের ধারণা, আলকানার একটি বিস্ফোরণে সাটি নিহত হয়েছেন৷ সেখানে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বোমা বানানোর সময় তা বিস্ফোরিত হয়েছিল৷ তবে সাটি তার ফ্ল্যাটে যে ব্যক্তির সঙ্গে থাকতেন, তিনি জানান, গত সপ্তাহে তাকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল৷
স্থানীয় মুসলিমদের আতঙ্ক
বার্সেলোনায় সিরিজ হামলার পর থেকে সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে৷ বার্সেলোনার রাভালের কেন্দ্রে একটি ছোট মসজিদ৷ সেখানকার ইমাম রাজা মিয়া জানালেন, মুসল্লিরা গত দু'দিনে খুব একটা আসছে না মসজিদে৷ রাজা ন'বছর আগে বাংলাদেশ থেকে বার্সেলোনায় আসেন৷ তিনি জানান, ‘‘আমাদের সবার মধ্যে এতটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে যে অনেকেই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না৷ অনেক কম মানুষ নামাজ পড়তে আসছেন৷ সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ জন নামাজ পড়তে আসেন, সেখানে ১০ থেকে ১৫ জন এখন নামাজ পড়তে আসছেন৷'' বৃহস্পতিবার এই শহরেই ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করা হয় এবং আহত হয় বেশ কয়েকজন৷ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস৷ এর কয়েক ঘণ্টা পরে ক্যামব্রিলসে একই ধরনের হামলায় আরও একজন নিহত হয়৷ পুলিশের গুলিতে সন্দেহভাজন পাঁচজন নিহত হয়৷
স্পেনে চরম ডানপন্থি দলগুলোর আধিপত্য তেমন একটা চোখে পড়ে না৷ সরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, স্পেনের মাত্র চার ভাগ মানুষ অভিবাসীদের ‘সমস্যা' হিসেবে মনে করে৷ তবে এটা ঠিক যে সাম্প্রতিককালে ইউরোপ জুড়ে যে জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার দায় স্বীকার করেছে ইসলামি জঙ্গি দল বা আইএস৷ এরপর থেকে বিদেশিদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের ঘটনা বেড়েছে৷ বিভিন্ন জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে ২০১৪ সালে এমন ঘটনার সংখ্যা যেখানে মাত্র ৪৮টি রেকর্ড করা হয়েছিল, ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩৪টিতে৷ তাই বার্সেলোনায় এই হামলার পর এরকমহামলা অনেক বেড়ে যাবে বলে আশংকা করছেন স্থানীয় মুসলমানরা৷
কাটালান: ইসলামি জঙ্গিবাদ যেখানে একটি সমস্যা
স্পেনের অন্যান্য শহরের চেয়ে বার্সেলোনায় ইসলামি উগ্রবাদীরা বেশি সোচ্চার৷ এটা হয়ত সেখানকার সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের কারণে৷ এছাড়া এই শহরে বহুজাতিক মানুষের বাস৷
২০১০ সালে উইকিলিক্সের ফাঁস হওয়ার তথ্যে দেখা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ সেসময়ই কাটালানে তরুণ মুসলিমদের মধ্যে উগ্রবাদী আচরণ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছিল এবং সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছিল৷ বলা হয়, কাটালান যে হুমকির মুখে এটা স্পষ্ট৷ আরও বলা হয়েছে, বার্সেলোনায় মুসলিম সম্প্রদায় বেশ বড় এবং তাদের মধ্যে কিছু যুবক ও তরুণদের দলে টানছে জিহাদি দলগুলো৷ উত্তর আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীরা এদের মধ্যে অন্যতম৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)