বাংলাদেশের গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে জার্মান সোলার সেল
১৯ জুলাই ২০১১লোহাকুড়া গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না এখন সেখানে জ্বলছে বাতি৷ গ্রামের স্কুলগুলোতে এখন রাতেও ক্লাশ চলে৷ প্রাপ্ত বয়স্কদের শিক্ষা দেয়া হয় রাতে৷ দিনের বেলা স্কুলটি ব্যস্ত থাকে বাচ্চাদের নিয়ে৷ এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র উন্নত সোলার সেলের সাহায্যে৷ সোলার সেলগুলোর সাহায্যে বাতি জ্বালানো থেকে শুরু করে কম্পিউটারে কাজ সবকিছুই বেশ নিঁখুতভাবে চলছে৷ আর এক্ষেত্রে অবদান রেখেছে জার্মানি৷
জার্মান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেডের জ্বালানি শক্তি বিশেষজ্ঞ অটো গম জানান,‘‘সোলার সেল প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে৷ প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার সোলার সেল আমরা বিক্রি করছি৷ ঘরে ঘরে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি৷''
বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের বাড়িতে এবং বিভিন্ন গ্রামের স্থানীয় বাজারে বিদ্যুৎ শক্তি পৌঁছে দিতে আগ্রহী জিআইজেড৷ সারা দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের ব্যবহার থেকে বঞ্চিত৷ বায়োগ্যাসের সাহায্যে কীভাবে রান্নার কাজ চালানো যায় গ্রামগুলোতে সেই চেষ্টাও করছে জার্মানি৷ একদিকে বায়োগ্যাস অন্যদিকে সৌর শক্তি – পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে এভাবেই উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে বাংলাদেশে৷ তবে যত সহজে সবকিছু ভাবা হচ্ছে তত সহজে এসব করা সম্ভব হচ্ছে না৷ অটো গম জানালেন,‘‘আমরা যেভাবে কাজ করছি তাতে আপাতত বেশ কিছু গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে৷ এখানকার গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের কোন উপায় নেই তাই সৌর শক্তি ব্যবহার বেশ ভাল একটি বিকল্প৷ তবে একথা ঠিক সৌর শক্তি অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ৷''
গ্রাম ছাড়া শহরের অনেক এলাকাও ডুবে থাকে অন্ধকারে৷ বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সরকারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না৷ বিদ্যুতের অভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো৷ রাতে গার্মেন্টস কারখানাগুলোয় কাজ চলে জেনারেটরের সাহায্যে৷ প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না৷ তখন কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকে৷ ভিয়েলাটেক্স গার্মেন্টস-এর ম্যানেজার দিদারুল আলম জানান,‘‘বেশির ভাগ কারখানাতেই এই সমস্যা দেখা যাবে৷ আমরা একা নই৷ সরকার কোন অবস্থাতেই বিদ্যুতের এই বিশাল চাহিদা মেটাতে পারছে না৷ প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না, সেটা বাড়িতে এবং কারখানায় – দুই জায়গাতেই সমান৷''
আকারে বাংলাদেশ জার্মানির অর্ধেক৷ কিন্তু জনসংখ্যা দ্বিগুন৷ বিদ্যুৎ শক্তির চাহিদা মিটছে না তাই অনেকেই অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিচ্ছে৷ বাংলাদেশে যে গ্যাস মজুদ রয়েছে তাও শেষ হয়ে আসবে একসময়৷
তাই পরমাণু শক্তির দিকে যেতে চাইছে সরকার৷ কিন্তু জাপানের ফুকুশিমায় সুনামি-উত্তর পরমাণু বিপর্যয়ের পর জার্মানি নিজে পরমাণু জ্বালানির পথ থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করেছে৷ সম্প্রতি জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী ডিয়ার্ক নিবেল তাঁর বাংলাদেশ সফরের সময় পারমাণবিক জ্বালানি বিপজ্জনক পথ সম্পর্কে সতর্ক করে দেন৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক