প্রতারণা
৩ জুলাই ২০১৩প্রতারক প্রতিষ্ঠানের নাম নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লি.৷ এটি সমবায় অধিদপ্তরের একটি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান৷ নারায়ণগঞ্জে তাদের নিবন্ধন হলেও ঢাকার জনসন রোডে শাখা খুলেছে তারা৷ স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে গ্রাহকদের ঋণ দেয় এরা শতকরা ১৮ ভাগ সুদে৷ সেই স্বর্ণালংকরা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকে শতকরা ১৪ ভাগ সুদে বন্ধক রেখে তারা ঋণ নেয়৷ দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুদের পার্থক্য শতকরা চার ভাগ৷ এটিই হলো সমবায় সমিতির ব্যবসা৷
কিন্তু নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লি. করছে প্রতারণা৷ তারা গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার সমবায় ব্যাংকে জমা না রেখে বেশি টাকার জন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে বন্ধক রেখেছে৷ আর গ্রাহকরা ঋণের টাকা সুদে আসলে ফেরত দেয়ার পরও, তাঁদের স্বর্ণালংকার ফেরত পাচ্ছেন না৷ গ্রাহকদের চাপে পড়ে তারা অফিস বন্ধ করে পালিয়েছে৷ কিন্তু ইতিমধ্যেই তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে অন্তত ১০ হাজার গ্রাহক৷ তাঁদের জমা দেয়া গয়নার বিপরীতে প্রতারকরা বাজার থেকে ৪০০ কোটি টাকা নিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, গ্রাহকদের ফেরত দেয়া টাকাও হাতিয়েছে তারা৷
পুরনো ঢাকাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার প্রতারিতরা এখন প্রতিদিনই ভিড় করছেন জনসন রোডে৷ কিন্তু প্রতারকদের পাওয়া যাচ্ছে না৷ প্রতারিত নাজমা বেগম জানান, ব্যবসার কাজে তিনি সোনার গয়না বন্ধক রেখেছিলেন৷ ঋণের টাকাও শোধ করেছেন৷ কিন্তু এখনও গয়না ফেরত না পাওয়ায় তাঁর সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে৷ সুফিয়া বেগম জানান, তিনি তাঁর মেয়ের ১৭ ভরি সোনার গয়না বন্ধক রেখেছিলেন৷ কিন্তু এখন গয়না ফেরত না পওয়ায় তাঁর মেয়েরও সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে৷
নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিটের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা খবির উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলের কাছে এই প্রতারণার কথা স্বীকার করেন৷ তবে তাঁর দাবি যে, প্রতারণার সঙ্গে তিনি জড়িত নন৷ জড়িত হলো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতি লীগের আহ্বায়ক এনাজুর রহমান চৌধুরী৷ অথচ এনাজুর রহমান চৌধুরী ডয়চে ভেলের কাছে বলেছেন যে, তিনি নন, সমিতির কিছু কর্মচারিই লুটপাট চালিয়েছে৷ তবে এখান চেষ্টা করা হচ্ছে গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার ফেরত দিতে৷
সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হুমায়ুন খালিদ ডয়চে ভেলেকে জানান, নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট বেআইনি কাজ করে গ্রাহকদের টাকা এবং স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছে৷ এ বিষয়ে তারা তদন্ত করছেন৷ যারা এ জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ আর দায়ীদের সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার এবং টাকা ফেরত দেয়া হবে৷
ঢাকা সহ সারা দেশে সমবায়ের নামে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এভাবে স্বর্ণ বন্ধকসহ নানা ধরণের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে৷ এতে প্রতারিত হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ৷ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের জিএম ও প্রধান নির্বাহী ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস ডয়চে ভেলেকে জানান, সমবায় ব্যাংকের বাইরে কোনো সমবায়ী প্রতিষ্ঠান এ ধরণের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে পারে না৷ সেটা বেআইনি৷