মুরাদ জংকে পাশে রাখেননি প্রধানমন্ত্রী
২৯ এপ্রিল ২০১৩সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান ইমু ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা৷ তাই প্রধানমন্ত্রী জনগণের ভাষা বুঝতে পেরেছেন৷ এ কারণেই মুরাদ জংকে সঙ্গে রাখেননি৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাভারে মুরাদ জংকে দেখা গেলে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি দারুণভাবে নষ্ট হত৷
সোহেল রানার গডফাদার হিসেবেই মুরাদ জংকে চেনেন সাভারের মানুষ৷ মুরাদ জং-এর ছত্রছায়ায় থেকেই সোহেল রানা কোটিপতি হয়েছে, বড় মাপের সন্ত্রাসী হয়েছে৷ তাই সাভারে এসে মুরাদ জংকে পাশে না রেখে প্রধানমন্ত্রী সঠিক কাজটিই করেছেন৷ এতে সাভারের মানুষ খুশি হয়েছেন, আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে৷
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাভারে বিধ্বস্ত রানা প্লাজা পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী৷ সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে উদ্ধার তত্পরতার খোঁজ খবর নেন৷ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷
হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আহতদের চিকিত্সার খোঁজ খবর নেন প্রধানমন্ত্রী৷ এ সময় প্রধানমন্ত্রী আহত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেন৷ প্রধানমন্ত্রী এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, 'মানবিক কারণে হলেও আগামী বৃহস্পতিবার বিরোধী দলীয় জোট যে হরতাল আহ্বান করেছে তা প্রত্যাহার করা উচিত৷'
সাভারের স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের প্রশ্রয়েই সোহেল রানা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে৷ কোন ধরনের আইন কানুনের তোয়াক্কা তিনি করতেন না৷ ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছর সাভার পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অষ্টম শ্রেণি পাশ সোহেল রানা৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়৷ সেই কমিটিতে সোহেল রানাকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়৷
রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর সাভারের যুবলীগের কমিটি চেয়ে পাঠান প্রধানমন্ত্রী৷ সংসদ সদস্য মুরাদ জং আসল কমিটি না পাঠিয়ে দ্রুত সোহেল রানাকে বাদ দিয়ে নতুন একটি তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেন৷ এই তালিকা নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা দেন৷ সেখানে তিনি বলেন, সাভারের যুবলীগের কমিটি তার হাতে৷ এই কমিটিতে কোথাও সোহেল রানার নাম নেই৷
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো তালিকা ধরে প্রমাণ করে দেয় সোহেল রানা যুবলীগ নেতা৷ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠে৷ পরে খোঁজ খবর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত হন মুরাদ জং তাকে বিভ্রান্ত করেছেন৷ আসল তালিকা তাঁর কাছে পাঠানো হয়নি৷ সেই থেকে আর মুরাদ জং এর সঙ্গে কথা বলেন না প্রধানমন্ত্রী৷
সাভারে একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সোমবার সাভারে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী সাভারে উপস্থিত মন্ত্রীদের ফোনে নির্দেশ দেন মুরাদ জং যেন তার আশপাশে না থাকেন৷ এই কারণে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে কোথাও মুরাদ জংকে পাওয়া যায়নি৷
প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করা প্রসঙ্গে মুরাদ জং ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি কোন তালিকা পাঠাননি৷ কে পাঠিয়েছে তাও তিনি জানেন না৷ প্রধানমন্ত্রী সাভারে গেলেন কিন্তু তাঁকে কেন পাশে দেখা যায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে কোন মন্তব্য করতে চাননি মুরাদ জং৷ তবে আশরাফ উদ্দিন খান ইমু বলেন, ‘‘সাভারে সন্ত্রাসীদের দিন শেষ৷ সন্ত্রাসীদের পুষে এখানে আর রাজনীতি করা যাবে না৷''