লাপাত্তা পাকিস্তানি ‘জঙ্গি’ মুবাশ্বের
১৭ ডিসেম্বর ২০১৬এর মধ্যে জাল টাকার দুই মামলায় ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর তাকে খালাস দেন ঢাকার পাঁচ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের তত্কালীন বিচারক রুহুল আমীন৷ সবশেষ গত ১০ নভেম্বর বিস্ফোরক দ্রব্য ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দুই মামলায় একই ট্রাইব্যুনালের বর্তমান বিচারক মো. জাহিদুল কবির পাকিস্তানি এই নাগরিককে খালাস দেন৷
মুবাশ্বেরের আইনজীবী সৈয়দা তাহমিনা হাসেমী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ থেকে মুক্তি পেয়েছেন মুবাশ্বের৷ তবে সে কোথায় গেছে তা আমি জানি না৷ আইন অনুযায়ী কোন বিদেশি নাগরিককে মুক্তি দিতে হলে সে দেশের দূতাবাস বা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর কাছে হস্তান্তর করতে হয়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু জানায়নি৷''
তিনি বলেন, ‘‘এমনকি আমি জেনেছি, তাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরে পাকিস্তান দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার মো. জামিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ তিনি কারা কর্তৃপক্ষকে বলেন, তাকে নিতে আমি আসছি৷ আমি না আসা পর্যন্ত তাকে যেন ছাড়া না হয়৷ এরপর তিনি কারাগারে গিয়ে জানতে পারেন আগেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ তাহলে কারা তাকে কি উদ্দেশ্যে ছাড়ল?''
মুক্তির পর মুবাশ্বের ঢাকায় আছেন, নাকি দেশে ফিরে গেছেন, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি তাহমিনা হাসেমী৷ নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ধরনের অপরাধী ছাড়া পেয়ে গেলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাতো হুমকিতে পড়ে৷ এদিকে আমাদের একটা দূর্বলতা তো আছেই৷''
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে জাল নোটসহ গ্রেপ্তারের পর মামলা হয় পাকিস্তানি নাগরিক মুবাশ্বেরের বিরুদ্ধে৷ মামলার এজাহারে তার স্থায়ী ঠিকানা করাচিতে লেখা হয়৷ এই মামলায় ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল আইনজীবী সৈয়দা তাহমিনা হাসেমীর জিম্মায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি৷ পরদিন রাত ১১টায় রাজধানীর চানখাঁরপুল থেকে তাকে আবার গ্রেপ্তার করে ব়্যাব৷ তখন ব়্যাব-১০ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘‘মুবাশ্বের পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন৷ কারাগার থেকে বের হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার একটি আবাসিক হোটেলে জঙ্গিদের নিয়ে বৈঠক করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ অল্পের জন্য তার সহযোগীদের ধরা যায়নি৷''
এরপর সূত্রাপুর থানা পুলিশ মুবাশ্বেরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, মুদ্রা জালিয়াতি এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তিনটি মামলা করে৷ মুবাশ্বের ‘পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার মূল সমন্বয়ক হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করছেন' বলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়৷ তার খালাসের বিষয়টি নিয়ে অনেক পরে জানাজানি হলে আলোচনা শুরু হয়৷ জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার বিদেশি একজন নাগরিক কীভাবে খালাস পেয়ে অন্তরালে চলে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশ্লেষকরা৷ বিদেশি নাগরিকদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের কাছে হস্তান্তরের নিয়ম থাকলেও মুবাশ্বেরের ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ তা মানেনি৷ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কাগজপত্র পেয়ে নিয়ম মেনে আমরা তাকে মুক্তি দিয়েছি৷ তিনি কোথায় আছেন আমাদের জানা নাই৷'' তবে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি৷
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ভাবে এরা লাপাত্তা হয়ে গেলেতো সত্যিই নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ে৷ এভাবেই তো আমাদের চলছে৷ কিভাবে জামিন হচ্ছে, কিভাবে ছাড়া পাচ্ছে আমরা কিছুই বুঝছি না৷ আদালত নিয়ে তো কিছু বলা যাবে না৷ তবে তদন্তকারীরা কিভাবে তদন্ত করছে সেটাও দেখা উচিত্৷ এত বড় একজন অপরাধী কিভাবে জামিন পেয়ে গেল, কাদের দুর্বলতার কারণে এটা হল সেটা খুঁজে বের করা দরকার৷''
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটার আনোয়ারুল কবির বাবুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালতে বিচার চলাকালে স্বাক্ষীদের হাজির হওয়া খুবই জরুরি৷ কিন্তু জঙ্গিদের মামলায় স্বাক্ষীরা আদালতে যেতে ভয় পান৷ কারণ এদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিলে কোথায় কি ঝামেলা হয়, সেই ভয়ে তারা অনেক সময় আদালতে আসতে চান না৷ সরকারের দায়িত্ব এসব নিরপেক্ষ স্বাক্ষীর নিরাপত্তা জোরদার করা৷''