Polls open in historic Bangladesh election
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব হুমায়ুন কবির একাধিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৩৫ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্রে সকাল আটটায় একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে৷
ঢাকা থেকে সাগর সরওয়ার জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ নতুন করে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করবে- এই প্রত্যাশায় সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটাররা আনন্দমুখর পরিবেশে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ শুরু করেছেন৷ নোয়াখালী-১ আসন বাদে ২৯৯টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷
ভোটাররা বলছেন, আজ গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রার স্বপ্নের দিন৷ ভোটাররা আগামী পাঁচ বছরের জন্যে সংসদে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন আজ৷
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৮ জন৷ এঁদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৫৪৯ জন৷ মহিলা ভোটার ৪ কোটি ১২ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৯ জন৷ তবে এই নির্বাচনের বাড়তি আকর্ষণ ১ কোটি ৭০ লাখ তরুণ ভোটার৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার তরুণ ভোটাররা যেদিকে যাবেন, বিজয়ের পাল্লা ভারী হবে সেদিকেই৷
ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি সমীর কুমার দে জানিয়েছেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ব়্যাবের ছয় লাখ নিরাপত্তাকর্মী মাঠে নেমেছেন৷ বিন্দুমাত্র ফাঁক রাখা হয়নি নিরাপত্তায়৷ ভোটাররা যাতে সুষ্ঠভাবে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন তার সব ব্যবস্থাই করা হয়েছে৷
সমীর জানান, ভোটকেন্দ্রের ভিতরে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা৷ ভোটকেন্দ্রের বাইরে কোন ধরনের সহিংসা বা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তৈরি করা হয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্স৷ দেশজুড়ে বিশেষ মোবাইল টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী৷
প্রায় তিন লাখ দেশী বিদেশী পর্যবেক্ষক সোমবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষন করছেন৷ এঁদের মধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি আসন পর্যবেক্ষনে রয়েছেন ১১ হাজার পর্যবেক্ষক৷ চট্টগ্রামেও সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহণ চলছে বলে প্রকাশ৷
বগুড়া থেকে আমাদের প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান বিলু জানাচ্ছেন, উত্তরাঞ্চলে নির্বাচনের পরিস্থিতি খুবই ভাল এবং সন্তোষজনক৷ পুলিশ জানিয়েছে এই অঞ্চলে কোথাও কোন জঙ্গি তৎপরতার আশংকা নেই৷
বিলু আরও বলেছেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নির্বাচনী আবহাওয়াও ঠিকঠাক৷ স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেছেন যে কোন ধরণের সহিংসতার আশংকা তারা করছেন না৷
বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা কোনভাবেই মোবাইল ফোন বহন বা ব্যবহার করতে পারবেন না৷ তবে সারাদেশে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক চালু রাখা হল৷
প্রসঙ্গত, ২০০৬ এর শেষভাগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসা৷ ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট তা বয়কট করলে অনিশ্চয়তা চরম রূপ পায়৷ এই সঙ্কটের মুখে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন৷ একই বছরের ১২ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব নেন ফখরুদ্দীন আহমদ৷
২০০৭ এর ১৫ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা সংসদ নির্বাচনের 'রোডম্যাপ' ঘোষণা করেন৷ বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রথম দফায় ১৮ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করলেও পরে তা পিছিয়ে ২৯ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজকের দিনটিকে ঘোষণা করে৷ এরপর সব আশংকা এবং কৌতূহলের অবসান ঘটিয়ে এখন চলছে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ৷