বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পরিবেশবাদীদের সংশয়
১৩ মার্চ ২০১১পরমাণু কেন্দ্র নিয়ে বাড়তি সতর্কতা
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তা ছাড়া এর বর্জ্যও পরিবেশবাদীদের একটি মাথাব্যথার কারণ৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল দুর্ঘটনার কথা বিশ্ববাসী এখনও মনে করে৷ পরমাণু তেজস্ক্রিয়তার ফলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বিস্তর এলাকা৷ কিছুদিন আগে জার্মানিতে পরমাণু কেন্দ্রের বর্জ্য ফেলা নিয়ে বেশ বড় একটা গোলমাল হয়ে গেছে দেশজুড়ে৷ তাই পরিবেশবাদীরা বরাবরই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাপারে সন্দিহান থাকেন৷
পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণকালে যেমন খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তেমনি এর কাঁচামাল আনা নেওয়া এবং পরিবহনও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ৷ উল্লেখ্য, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটে সেটা খুবই ক্ষতিকর৷ এই ধরণের বিকিরণের সংস্পর্শে মানুষ কিংবা প্রকৃতি ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে৷ তাই এই ধরণের পরমাণু কেন্দ্র জনবসতি থেকে দূরে এমন জায়গায় তৈরি করা হয়৷
চাহিদাই সবার আগে নয়
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয় মূলত বিদ্যুৎ চাহিদা মোকাবিলার কথা চিন্তা করে৷ পশ্চিমা বিশ্বের বহু দেশে এই ধরণের বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে৷ কিন্তু পরিবেশ ইস্যু নিয়ে বরাবরই এই প্রসঙ্গে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যায়৷ কারণ পরিবেশবাদীরা মনে করেন, দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর কথা বলে পরিবেশ ধ্বংস করা কোনভাবেই উচিত নয়৷ এজন্য তারা সবসময় বিকল্প জ্বালানী উৎস খোঁজার দিকে জোর দেন৷ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ তাই বিকল্প জ্বালানির দিকে এখন ঝুঁকে পড়েছে৷ তবে সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপরই নির্ভরশীল৷
পরিবেশের দিকেও লক্ষ্য রাখুন
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে৷ জানা গেছে, রুপগঞ্জে এই কেন্দ্র নির্মাণের কথা রয়েছে৷ তবে বাংলাদেশের পরিবেশবাদীরা এই ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকে উপেক্ষা না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা'র সাধারণ সম্পাদক ডা. মতিন আহমেদ তেমনটাই জানালেন৷ এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা জানি যে সরকার এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে৷ ইতিমধ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে এক দফা চুক্তি হয়ে গেছে৷ আমরাও উন্নয়ন কিংবা বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিরুদ্ধে নই৷ তবে আমাদের আশা, যে সরকার এই কেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব ভালোভাবে খতিয়ে দেখবে৷ যে কোন মূল্যে উন্নয়ন কিংবা বিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে আমরা নই৷''
ডা. মতিন জানিয়েছেন তারা সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত এই ইস্যুটিকে তুলে ধরেননি কেবল দেশের বর্তমান সার্বিক অবস্থার কথা চিন্তা করে৷ তবে সরকার যাতে পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণের বেলায় পরিবেশ ইস্যুটিকে একেবারে হেলাফেলা না করে সেজন্য তারা এই বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করার পক্ষে৷ এই ক্ষেত্রে নতুন করে যে পরিবেশ নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে তাতেও তারা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চাপ দেবেন বলে জানিয়েছেন ডা. আবদুল মতিন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা শিগগিরই এই বিষয়টিকে তুলবো, যাতে করে সরকার সব দিক বিবেচনা করে কাজটি সম্পন্ন করেন৷ কারণ আমরা জানি যে পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোতেও এই ধরণের পরমাণু কেন্দ্র তৈরি এবং তার বর্জ্য অপসারণের কাজটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল৷ এবং এটার প্রভাব মাটিতে, পানিতে এবং মানুষের স্বাস্থ্যেও অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী৷''
বর্জ্য সরাবে রাশিয়া
জানা গেছে, যে প্রস্তাবিত পরমাণু কেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন কাজ করছে৷ বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে প্রথম দফার চুক্তি অনুযায়ী পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য অপসারণের কাজটি তারাই করবে৷ ফলে বাংলাদেশে বর্জ্য ফেলা এবং এখানে তার পরিবেশগত প্রভাব পড়ারও তেমন কোন আশংকা নেই৷ ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকেও এই নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা হয়েছে বলে পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন