পারমাণবিক কর্মসূচির ঝুঁকি ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ
১২ মার্চ ২০১১জাপানের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সেদেশের পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি এবং এর ফলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আবারো মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে পরমাণু কর্মসূচির ধ্বংসাত্মক চেহারা৷ এমনকি শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের ইচ্ছা থেকে পরমাণু কর্মসূচি হাতে নিলেও তা যে ডেকে আনতে পারে চরম ক্ষতি তারই উদাহরণ দেখা গেছে বিগত দিনগুলোতে৷
১৯৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়ার মাজাক প্লুটোনিয়াম কারখানায় বিপুল পরিমাণ পরমাণু বর্জ্য বিস্ফোরণে নিহত হয় কমপক্ষে এক হাজার মানুষ৷ তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয় প্রায় দশ হাজার৷ তবে ঘটনাটি প্রথম জানাজানি হয় ১৯৭৬ সালে৷ আর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয় ১৯৯০ সালে৷
একই বছর ৭ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের উইন্ডস্কেল পরমাণু চুল্লিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৯ জন প্রাণ হারান৷ এছাড়া সেখানে আরো কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটে৷ ছড়িয়ে পড়ে তেজস্ক্রিয়তা৷ পরে অবশ্য এটির নাম পাল্টিয়ে সেলাফিল্ড করা হয়৷ ১৯৬১ সালের ৩ জানুয়ারি ইডাহো ফলস এর পরমাণু চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটে৷ প্রাণ হারান তিনজন৷ তেজস্ক্রিয়তার শিকার হন আরো অনেকে৷
১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ পেনসিলভানিয়ার থ্রি মাইল আইল্যান্ড-এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভুল পাম্পিং এর ফলে চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে৷ তখন ঐ এলাকা থেকে স্থানচ্যুত হয় প্রায় দুই লাখ মানুষ৷ ১৯৮৬ সালের ৪ জানুয়ারি ওকলাহোমার গোরে ইউরেনিয়াম কারখানায় বিষাক্ত গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটে৷ একজনের প্রাণহানি ঘটে৷ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন শত শত মানুষ৷
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল ঘটে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা৷ ইউক্রেনের চেরনোবিল কারখানা থেকে বিষাক্ত তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে৷ এমনকি পশ্চিম ইউরোপের কিছু অঞ্চলেও দেখা গেছে সেই তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা৷ তাৎক্ষণিকভাবে মারা যায় ৩২ জন৷ কিন্তু এই দূষণের শিকার হয়ে পরে আরো আট হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে৷
এছাড়া একই বছরের মে মাসে জার্মানির হাম-উইন্ট্রোপ কারখানায়, ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে নিউইয়র্কের লাইকামিং-এ, ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে জার্মানির গ্রাইফসভাল্ডে এবং ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে রাশিয়ার টমস্ক-৭ কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটে৷ এসব কারখানার অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়৷ পারমাণবিক কারখানাগুলোতে ঘটেছে আরো বেশ কিছু ছোট ছোট দুর্ঘটনা৷ আর এসব দুর্ঘটনার ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষকে পঙ্গুত্ব থেকে শুরু করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়েছে৷
শুক্রবারের ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং সুনামির পর জাপানের পরমাণু স্থাপনাও ঝুঁকির মুখে৷ ইতিমধ্যে একটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে৷ ফলে ঐ অঞ্চলের মানুষ তেজষ্ক্রিয়তার ক্ষতির আশঙ্কায়৷ ফলে সময় এসেছে বিশ্ব নেতাদের পরমাণু কর্মসূচির ঝুঁকি ও নিরাপত্তা নিয়ে আরো একবার ভেবে দেখার৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার