1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলা শিক্ষিকার দরকার নেই পশ্চিমবঙ্গের স্কুলে!

২৩ মার্চ ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গে 'বাংলা ভাষা প্রায় নেই বললেই চলে'। এই কারণ দেখিয়ে বাংলা শিক্ষিকার চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়। পরে বিজ্ঞপ্তির ভুল শুধরে পুনর্বহাল করা হয়েছে শিক্ষিকাকে।

https://p.dw.com/p/4P6jc
বাংলাপক্ষ
ছবি: Payel Samanta/DW

কলকাতার উত্তর শহরতলির একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে রয়েছে বাংলা ও হিন্দি। বেলঘরিয়ার হোলি চাইল্ড স্কুল কর্তৃপক্ষ বাংলা শিক্ষিকাকে ১৭ মার্চ চিঠি দেন। বাংলা ভাষাকে কার্যত অস্তিত্বহীন দাবি করে শিক্ষিকাকে চাকরি ছাড়তে বলা হয়।

এই বিজ্ঞপ্তি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হতেই বিতর্ক দানা বাঁধে। পরের দিনই চিঠির ভ্রান্তি শুধরে দেন কর্তৃপক্ষ। সংশোধিত চিঠি দিয়ে বলা হয়, বাংলা ভাষার পড়ুয়া না থাকায় শিক্ষিকাকে চাকরি ছাড়তে বলা হচ্ছে। ভাষাগত ভুলের জন্য ক্ষমা চান স্কুলের সচিব কমলেশ বসু।

কিন্তু এতে বিতর্ক থামেনি। স্কুলের বিরুদ্ধে পথে নামে তিনটি বাঙালি সংগঠন। বাংলা পক্ষ, বঙ্গযোদ্ধা, জাতীয় বাংলা সম্মেলন। স্মারকলিপি দেন বাম ছাত্রেরা। স্কুলের সামনে বড় জমায়েত করে বাংলা পক্ষ। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''ভারতের অন্যান্য রাজ্যে সব স্কুলে রাজ্যের ভাষা পড়ানো বাধ্যতামূলক। পশ্চিমবঙ্গে তার ব্যতিক্রম হবে কেন?''

চাপের মুখে স্কুল ওই শিক্ষিকাকে ফের কাজে বহাল করেছে। সচিব বলেছেন, ''বাংলা পড়ুয়ার সংখ্যা কম থাকায় শিক্ষিকাকে কিছুদিনের জন্য কাজে বিরতি নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কোভিডের জেরে ছাত্র সংখ্যা এমনিতেই কমেছে। পরিস্থিতি বদল হলে স্কুল আবার পুরনো ছন্দে ফিরবে।''

হোলি চাইল্ডে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়। শ'পাঁচেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। পশ্চিমবঙ্গের একটি চালু স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা পড়ার কেউ নেই, এই ছবিতে উদ্বিগ্ন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''স্কুলে বাংলা পড়ানো না হলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই ভাষা সম্পর্কে তুচ্ছতার বোধ তৈরি হবে। এতে আঞ্চলিক ভাষা দুর্বল হয়ে পড়বে।''

‘বাংলা ভাষা আগামী ১০০-১৫০ বছরে প্রান্তিক হয়ে যাবে’

স্থানীয় বিধায়ক মদন মিত্র স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। স্কুলে বিক্ষোভ দেখানোয় বাংলা পক্ষকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বলেন, ''অনেক বড় স্কুলে বাংলা পড়ানো হয় না। সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন না কেন? এখানে হিন্দিভাষী পড়ুয়া বেশি বলে বাংলা পড়ার ছাত্র মিলছে না। এ ভাবে বিক্ষোভ করলে পাল্টা তৃণমূল পথে নামবে।''

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মোকাবিলায় 'জয় বাংলা' স্লোগান তুলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঙালির পক্ষে সওয়াল করে বিজেপিকে 'হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী দলের' তকমা দিয়েছিল বাংলা পক্ষ। কিন্তু খোদ শাসক দলের বিধায়কের হুঁশিয়ারির মুখে পড়তে হল তাদের।

গর্গের বক্তব্য, ''বড় স্কুলেও আমরা বাংলা ভাষার পক্ষে দাবি রেখেছি। এই সব রাজনৈতিক দল বহিরাগতদের তোষণ করে ভোটের জন্য। আমরা চেষ্টা করছি বাঙালিকে ভোটার থেকে ভোটব্যাঙ্কে পরিণত করতে।''

কোভিড অতিমারির জেরে ধাক্কা খেয়েছে স্কুলের পঠনপাঠন। ছাত্র না থাকায় অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়ালেও সরকারি ক্ষেত্রের অবস্থা খারাপ। মাতৃভাষায় পড়াশোনার সুযোগ তাতে আরো কমেছে। 

এই বাস্তবতা স্বীকার করে অভিভাবকদের দিকে আঙুল তুলেছেন পবিত্র সরকার। তাঁর মতে, ''অনেক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে বাংলায় কথা বলতে দেয়া হয় না। বাড়িতে মা-বাবা হুকুম দেন, বেড়াল নয় ক্যাট বলবে! এতে বাংলা ভাষা ক্রমশ প্রান্তিক হয়ে উঠবে। এখনই নয়, আগামী ১০০-১৫০ বছরে।''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷