‘ঘাতক বাহিনী’
৭ মে ২০১৪
জেলা বিএনপির নেতারা সুনামগঞ্জ শহরের নন্দন প্লাজায় মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রবাসী বিএনপির নেতা মুজিবুর রহমান গত রোববার সুনামগঞ্জ শহরের শহীদ মিনারে বিএনপির গণ-অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেন৷ বিকেলে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সিলেটে রওনা দেন৷ এরপর থেকে চালক রেজাউল হকসহ (৩২) তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷
মুজিবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের সুলতানপুর এলাকায়৷ সুনামগঞ্জ শহরের হাজিপাড়া এবং সিলেট শহরে মুজিবুর রহমানের বাড়ি রয়েছে৷ জিডিতে মুজিবুর রহমানের আত্মীয় রবিউল ইসলাম উল্লেখ করেন, রোববার বিকেলে তিনি সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন৷ এরপর রাত সাড়ে আটটা থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ৷ সব জায়গায় তাঁদের খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে৷ কিন্তু কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি৷
তিনি জানান, মুজিবুর রহমান স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন৷ ছয় মাস আগে একা দেশে আসেন৷ রবিবার বিকেলে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটে রওনা হওয়ার আগে তাঁর ভাতিজা আবুল হোসেনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়৷ পরে রাতে আবুল হোসেন আবার তাঁকে ফোন করলে তাঁর ও গাড়িচালকের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘‘আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত এবং সুস্থ অবস্থায় মুজিবুর রহমানের সন্ধান চাই৷ আগামীকাল বুধবার সকালে এ ঘটনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে৷ সেখান থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে৷''
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জানে আলম খান বলেন, ‘‘দুজন ব্যক্তির মোবাইল ফোন দু'দিন ধরে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে – থানায় এ রকম একটি জিডি হয়েছে৷ এখানে বিএনপির কোনো নেতার কথা উল্লেখ নেই৷ আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি৷''
এদিকে ঢাকায় বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, বর্তমান অবৈধ সরকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দেশব্যাপী অব্যাহতভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এবং গুম করছে৷ তিনি গাড়ি চালকসহ সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি-র সাবেক সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিব নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে করে এ সব কথা বলেন৷
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করতে বর্তমান ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী এতটাই সীমালঙ্ঘন করেছে যে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকে পৈশাচিকভাবে হত্যা ও অপহরণ করে গুম করা যেন তাদের দৈনন্দিন কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আর এই সব জীবনবিনাশী অপকর্মে শাসকগোষ্ঠী নিজেদের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগ ছাড়াও পুলিশ ও ব়্যাবকে ঘাতক বাহিনীতে পরিণত করে ব্যবহার করছে৷'
তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও গুম করে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে না৷ তাদের ক্ষমতাবিলাস চরম পরিণতি বরণ করবে৷ সব অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে এদেশের সংগ্রামী জনতা এখন ঐক্যবদ্ধ৷ অচিরেই উচ্ছৃঙ্খল, বেপরোয়া নরঘাতক অবৈধ সরকারের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে জনগণ ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীকে উত্খাত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে৷''
ফখরুল অবিলম্বে নিখোঁজ মুজিবুর রহমানসহ তার গাড়িচালককে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার জোর দাবি জানান৷