বলিউডে যৌন হয়রানির অভিযোগ, ভারত জুড়ে তোলপাড়
সাবেক মিস ইন্ডিয়া থেকে বলিউড নায়িকা হলেও বহুদিন শিরোনামে ছিলেন না তনুশ্রী দত্ত৷ তবে দশ বছর আগে নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির অভিযোগ ঘিরে এখন তোলপাড় চলছে ভারতে৷তনুশ্রীও ফিরেছেন শিরোনামে৷ বিস্তারিত এই ছবিঘরে৷
দশ বছর আগে...
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তনুশ্রী তুলে আনেন ২০০৮ সালের সেই ঘটনা৷ জানান, সে বছর ‘হর্ণ ওকে প্লিজ’ ছবির সেটে অভিনেতা নানা পাটেকার তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন৷পরে সেই ছবি থেকে তিনি সরে দাঁড়ান৷ তাঁর বদলে নেওয়া হয় রাখি সাওয়ান্তকে৷ হেনস্থার বিষয়ে চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোগ্রাম প্রযোজক সংস্থা, ‘সিন্টা’-র কাছে অভিযোগ করেও কোনো বিচার পাননি৷ এর আগে ২০১৩ সালেও এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন তিনি৷
কে এই তনুশ্রী দত্ত?
২০০৪ সালের মিস ইন্ডিয়া তনুশ্রী দত্ত একজন ভারতীয় মডেল এবং অভিনেত্রী৷ ‘চকলেট’ ও ‘আশিক বানায়া আপনে’-র মতো ছবিতে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন তিনি৷ ২০০৪ সালের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় দশজন ফাইনালিস্টের মধ্যেও ছিলেন তিনি৷ ২০০৮ সালের ঘটনার পর তনুশ্রী হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলিউড থেকে বিদায় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান৷
দশ বছর পর...
যৌন হেনস্থাবিরোধী ‘মি টু’ আন্দোলনের ঢেউ অবশেষে ভারতেও লেগেছে৷ সম্প্রতি তনুশ্রী ভারতে ফিরে এসে জনসমক্ষে নানা পাটেকারকে অভিযুক্ত করেন, যার ফলে শুরু হয় তোলপাড়৷ দশ বছর আগে যে ঘটনায় কেউ কান দেয়নি, তা নিয়েই শুরু হয় তুমুল আলোচনা৷ দশ বছর আগে তনুশ্রীর বাবা যে নানা পাটেকার, পরিচালক রাকেশ সারং, কোরিওগ্রাফার গণেশ আচার্য ও প্রযোজক সামি সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন – সেই সত্যও বেরিয়ে আসে৷
মন্তব্যহীন ‘বিগ বি’
এক অনুষ্ঠানে বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চনের কাছে নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে বলে প্রসঙ্গটি তিনি বেমালুম এড়িয়ে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘ আমার নাম তনুশ্রী দত্ত বা নানা পাটেকার কোনটিই নয়, এ বিষয়ে আমি কেন মন্তব্য করব?’’
সলমানও এড়িয়ে গেলেন
বলিউড সুপারস্টার সলমান খানও এই ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘আমার এ বিষয়ে ভালো জানা নেই৷ গোটা বিষয়টি এখনও বুঝে না উঠলেও আমি নিশ্চিত যে আইনি পথেই বিষয়টি চলবে৷’’
আমির সন্দিহান!
জনপ্রিয় অভিনেতা আমির খানও ঘটনাটি সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য না করে সমালোচিত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না যে, আমার এখানে কিছু বলা ঠিক হবে৷ আপাতত তদন্ত করে দেখা উচিত সত্যিই এই ধরনের ঘটনা আদৌ ঘটেছে কি না৷’’
ভিডিও কী বলে?
ইতিমধ্যে ২০০৮ সালে অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্তের গাড়ি ভাঙচুরের দৃশ্যসম্বলিত একটি ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে৷ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কিছু লোক তনুশ্রীর গাড়ির উপর হামলা করছে৷ তনুশ্রী মনে করেন, নানা পাটেকারের হয়ে একটি রাজনৈতিক দলের গুন্ডারা এ হামলা চালিয়েছিল৷ তাঁর মতে, অভব্য আচরণের প্রতিবাদে তিনি শুটিং স্পট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নানা পাটেকারই মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার ওই সদস্যদের খবর দিয়েছিলেন৷
নানার পাল্টা জবাব
তনুশ্রী দত্তের নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে নানা পাটেকার বলেন, ‘‘১০ বছর আগে যা সত্য ছিল আজও তাই আছে ও আগামীতেও তাই থাকবে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার আইনজীবী আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন বলেই আমি নীরব৷ নইলে, প্রেসে কথা বলার কোনো সমস্যা আমার নেই৷’’ নানা পাটেকরের আইনজীবী ইতিমধ্যে তনুশ্রীকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন৷
তনুশ্রীর পাশে সোহা আলি খান
অভিনেত্রী সোহা আলি খান তনুশ্রীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বলেন,‘‘ভারতের মতো দেশে নারীর সঙ্গে প্রতিদিনই কিছু-না-কিছু ঘটতে থাকে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘এমন ঘটনার বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে অনেক সাহস লাগে, তাই আমি মনে করি নারীদের এই বিষয়ে সমর্থন জানাতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে।’’ সোহা জানান, তিনি তনুশ্রী বা যৌন হয়রানির শিকার এমন যে কোনো মহিলার পাশে আছেন৷
ফারহানও তনুশ্রীর পাশে
তনুশ্রীর সাহসের প্রশংসা করে চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা ফারহান আখতার বলেছেন, ‘‘যদি কোনো নারী নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে চায়, তবে আমাদের তা শোনা অন্তত উচিত৷ আমরা তার কথা শোনার আগেই ঘোষণা করছি যে, অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর কেরিয়ার শেষ হওয়ার কারণে তিনি মিডিয়ার আলোচনায় আসতে চান!’’ অভিযোগ তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তিনি৷ নেহা ধুপিয়া, অর্জুন কাপুরের মতো তারকারাও তনুশ্রীকে সমর্থন জানিয়েছেন৷
দায় এড়ানোর কৌশল?
২০০৮ সালে চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজক অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে থাকা সাবেক সেন্সর বোর্ডপ্রধান পহলাজ নিহলানি পুরো বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে দাবি করেছেন, তিনি শুধু শুটিং সেটে মনোমালিন্য সম্পর্কে জানতেন৷ তনুশ্রী আগে কখনো হয়রানি সম্পর্কে কিছু বলেননি বা না পাটেকারের নাম কোথাও উল্লেখ করেননি বলেও দাবি তাঁর। অথচ দশ বছর আগেই এফআইআর করেছিলেন তনুশ্রী৷
তনুশ্রীর জবাব
মহারাষ্ট্র রাজ্য মহিলা কমিশনে ইতিমধ্যে নানা পাটেকার, রাকেশ সারং, গণেশ আচার্য ও সামি সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তনুশ্রী৷ ১০ বছর আগে রাজনৈতিক হুমকি ও সহিংস হামলার জন্য মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার কর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তিনি৷
আরো কেচ্ছা বেরোলো
এই ঘটনাবলীর আলোকে, 'মি টু' আন্দোলন ভারতে যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে। রজত কাপুর ও বিকাশ বেহলের মতো তারকাদের বিরুদ্ধেও নতুন ও পুরোনো অভিযোগ খবরে উঠে আসছে। এখন দেখার এটাই যে, আন্দোলনটি আদৌ সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করতে সক্ষম হয় কিনা।