বন্ধু তো সবাই, সুহৃদ কোথায়?
৪ আগস্ট ২০১১ব্যাপারটা যাকে বলে গুরুচরণ৷ এই মুখচ্ছবি বা ফেসবুকের জগতে মানুষ বড্ড বেশি বন্ধুবৎসল হয়ে উঠেছে৷ কুমিল্লার গণ্ডগ্রাম হোক বা নিউ ইয়র্ক৷ মিসিসিপির চাষী বা মেদিনীপুরের জোতদার, সকলেই এখন এই নেট জগতে ফেসবুকে হাজির৷ চকচকে ঝকঝকে ফেসবুক প্রোফাইলে সকলেই বেশ হাসিমুখে কেবল বন্ধুসঙ্গ করে চলেছে৷ এ এক হাওয়ায় ভাসা জগত৷ সেখানে আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, পুত্র কন্যা, কেউই নেই৷ সকলেই বন্ধু৷ সকলেই সুহৃদ৷
কিন্তু এই যে পিতাপুত্র থেকে ভাইবোন, সব রক্ত সম্পর্ক মুছে, সব ধরণের আত্মীয়তা ভুলে গিয়ে সকলে বন্ধু, এটা কি সত্যিই সম্ভব? জার্মান মনস্তত্ববিদ মিশায়েল শেলব্যার্গের মতে, এটা অসম্ভব ব্যাপার৷ কারণ, মানুষের ঠিকঠাক বন্ধুর সংখ্যা তিনের বেশি হয় না সচরাচর৷ আর তার আগে জানতে হবে, বন্ধুত্ব কাকে বলে?
বন্ধুত্ব বিষয়টাকে শেলব্যার্গ ব্যাখ্যা করে বলছেন, বন্ধু তাকেই বলা যেতে পারে, যে বন্ধুর সুখদুঃখের সাথী হবে৷ সে সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা থাকবে বটে, কিন্তু সে ভালোবাসা হবে বিশেষ যৌক্তিক৷ বিশেষ মাত্রার৷ বন্ধুর ওপরে আরেকজন নির্ভর করতে পারবে, বিশেষ প্রয়োজন বিশ্বস্ততারও৷ এইসব শর্তাবলী কি মুখচ্ছবির বন্ধুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? এ প্রশ্নটা কিন্তু এখন খুবই দামী প্রশ্ন৷
এর জবাবে আরেক জার্মান মনস্তত্ববিদ ক্রিস্টা রোট জাখেনহাইমের ব্যাখ্যা আবার আরেকরকম৷ জার্মান মনস্তত্ত্ব সংগঠনের প্রধান ক্রিস্টা বলছেন, বন্ধু মানে সে-ই বিশেষ মানুষটি, যার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের সাক্ষাৎ সম্পর্ক আছে এবং থাকছে৷ যে ঘনিষ্ঠতার সবকিছু একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবে৷ যাকে যেকোন সময়, যেকোন সমস্যা বা আনন্দের ভাগীদার করা যাবে৷ তবেই তাকে বলা যেতে পারে বন্ধু৷
কিন্তু এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, যখন হাতে কানে মোবাইল, চোখে ফেসবুক, মনে নানান আবেগের চলাফেরা, সেই ভার্চুয়ালিটিতে বাস্তব বন্ধুকে পাওয়া তো যায়ই না, বরং রাজ্যের প্রত্যাশা তৈরি হতে থাকে মানুষের মধ্যে৷ সেই প্রত্যাশায় জল ঢেলে দেয় অবশেষে সেই ভার্চুয়ালিটিই৷ অর্থাৎ বন্ধুর কর্তব্য কেউ করে না, কিন্তু বন্ধু বলে নিজেকে জাহির করে যায় সারাক্ষণ৷
আধুনিকতার এও এক ঘোর সমস্যা৷ বন্ধু তো সবাই, সুহৃদ কোথায়?
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন