কবীর সুমনের সাক্ষাৎকার
১৪ এপ্রিল ২০১২পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের অবসান ঘটিয়ে পরিবর্তন এনেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিপুল ভোটে জিতে তিনি শুধু রাজ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, নতুন দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শরিক দল হিসেবে জাতীয় ও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও বিশাল প্রভাব রাখছেন৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে সুমন বললেন, তিস্তা চুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মুখটা ম্লান করে দিয়েছেন মমতা৷ আলাপ-আলোচনা বা কূটনীতির পথে না গিয়ে তিনি ‘বাগড়া দিলেন'৷ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ভাগের সেচ ইত্যাদির জন্য এই চুক্তির বিরোধিতা করার কথা বললেও বাস্তবে উত্তরবঙ্গের কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে খানিকটা তুষ্ট করতে তিনি এটা করলেন৷
‘‘পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বারে বারে বলতেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্কটি বাবা দেখো৷ যেন ভালো থাকে৷ আমাদের প্রজন্ম চলে গেলে আমাদের ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনিরা হয়তো মনে রাখবে না৷ এই যে যত্নটা, এই যে জায়গাটা, এই যে পরিসরটা – এ ব্যাপারে বর্তমান মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পারিষদবর্গ কেউ বিন্দুমাত্র চিন্তিত বলে মনে হয় না৷''
বড় দেশ হিসেবে ভারতের বিশেষ দায়িত্ব আছে বলে মনে করেন সুমন৷ ‘‘বদান্যতার জায়গা থেকে নয়, সহানুভূতির জায়গা থেকে নয় – সহমর্মীতার জায়গা থেকে, সংহতির জায়গা থেকে এটা করতে হবে৷'' তিস্তা চুক্তিতে ‘বাগড়া দিয়ে' শুধু দুই দেশের ক্ষতি হলো না, দুই দেশের সম্পর্কের নিবিড়তার বিরুদ্ধে যে শক্তি বা অপশক্তি দুই দেশেই ক্রিয়াশীল, সেই অপশক্তির সুবিধা হতে পারে বলে সতর্ক করে দিলেন সুমন৷
২০০৬ সাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুক্ত কবীর সুমন৷ সাংবাদিক হিসেবে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ঘটনা তুলে ধরেছেন তিনি৷ সুমন বলেন, ‘‘আমি মমতা দেবীকে নাগরিক স্কুল-কলেজ শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার পথটিকে একটু সুগম করেছিলাম৷'' গ্রামবাংলা মমতাকে চিনলেও তখন শহরের লোক তাঁকে এতটা চিনতেন না৷ শাসক সিপিআইএম'কে ক্ষমতা থেকে হটাতে অনেকেই তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন৷ ক্ষমতায় এসে কিন্তু মমতা একেবারে বদলে গেলেন বলে মনে করেন কবীর সুমন৷
তাঁর অসাধারণ ক্ষমতার উল্লেখ করে সুমন বললেন, ‘‘তিনি এত কষ্ট করতে পারেন, যে আমরা ভাবতেও পারবো না৷ তাঁর অনেক গুণ, অসামান্য এক মহিলা নেতা তিনি৷'' কিন্তু বিরোধী নেতা থেকে ক্ষমতায় আসার পর তাঁর অনেক দিক ফুটে উঠলো৷ ‘‘তিনি অদ্ভুত একটা মানসিকতা নিয়ে চালান৷ সেখানে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই৷ কারো মত নেই৷ তিনি যা বলবেন, সেটা হতে হবে৷ যে করে হোক তিনি সেটা সাব্যস্ত করবেন৷''
এককালে যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামফ্রন্ট সরকারকে বিদায় করতে মমতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক ঘটনার জের ধরে তাঁরাই আবার মমতার সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন৷ ভূমি উচ্ছেদ থেকে শুরু করে সরকার বিরোধিতার কণ্ঠকে বন্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বেড়ে চলেছে৷ সোশাল নেটওয়ার্কে মমতাকে নিয়ে এক ব্যঙ্গচিত্রের প্রচারের দায়ে বৃহস্পতিবার রাতে অম্বিকেশ মহাপাত্র নামে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে জনমত বেড়ে চলেছে৷ এর একাধিক উদাহরণ তুলে ধরলেন কবীর সুমন৷
সাক্ষাৎকার: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ