বঙ্গভবনে কোটাবিরোধীদের স্মারকলিপি, প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
১৪ জুলাই ২০২৪বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ শিক্ষার্থীরাও এই মিছিলে যোগ দেন।
মিছিল বঙ্গভবনের দিকে যেতে শুরু করলে গুলিস্তানে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। তবে এক পর্যায়ে ব্যারিকেড সরিয়ে তারা আবার বঙ্গভবনের দিকে যেতে থাকেন।
ডেইলি স্টার জানিয়েছে, কয়েক হাজার শিক্ষার্থী গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এবং সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে পুরো সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এই আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে পরবর্তীতে ১০ জনকে বঙ্গভবনে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরী স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
চীন সফর নিয়ে করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনেও উঠে এসেছে কোটা নিয়ে আন্দোলনের ইস্যুটি। তিনি বলেন, আদালত থেকে রায় এলে সরকারের আর কিছু করার থাকে না।
তিনি বলেন, ''মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন। যখন মামলা করার পর আদালত যখন কোনো রায় দেন তখন সরকারের নির্বাহী বিভাগের কিছু করার থাকে না। কারণ আদালতের বিষয় আদালতেই সমাধান করতে হবে।''
কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ''উদ্দেশ্যটা ছিল—আগে দেখ কোটা বাদ দিলে অবস্থাটা কী হয়। এখনো কী অবস্থা হয়েছে সেটা দেখতে বেশিদূর যাওয়া লাগবে না। এবারই দেখেন, ফরেন সার্ভিসে মাত্র দুই জন মেয়ে চাকরি পেয়েছেন। আর পুলিশ সার্ভিসে চার জন মেয়ে চান্স পেয়েছেন।''
তিনি আরো বলেন, ''কোটা বন্ধ করার আজকে ফলাফলটা কী দাঁড়াল। …আমাদের দেশের সব এলাকা সমানভাবে উন্নত নয়। কোনো কোনো এলাকায় অনগ্রসর সম্প্রদায়ও আছে। সেইসব এলাকার মানুষের কি কোনো অধিকার থাকবে না। কোটা বন্ধ করে দেওয়ার পরে ২৩টি জেলা থেকে একজনও পুলিশে চাকরি পাননি।''
কোটা নিয়ে ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই এর পর্যায়ে ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা। তবে এবারের আন্দোলনে ধ্বংসাত্মক কিছু হলে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ''রাজপথে আন্দোলন করছে, আন্দোলন করতেই থাকবে। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণভবে আন্দোলন করছে ততক্ষণ কেউ কিছু বলছে না। এর বাইরে যখন কিছু করবে, পুলিশের গাড়ি ভাঙবে, বা পুলিশের গায়ে হাত তুলবে তখন আইন তার নিজের গতিতে চলবে।''
২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের পর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে সরকার। ওই বছরেরই ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন।
এ বছরের ৫ জুন এর রায় ঘোষণা হয়। রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার বাধা দূর করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। রায় স্থগিত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাটিতে পক্ষভুক্ত হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান আবেদন করেন।
এরপর মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে কোটা বহালে হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেয়।
হাইকোর্টের রায়ের পর থেকেই মূলত কোটা পদ্ধতি সংস্কার দাবি করে আবার আন্দোলনে নামে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। ৭ জুলাই থেকে 'বাংলা ব্লকেড' নামে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়।
এডিকে/জেডএ (দ্য ডেইলি স্টার)