1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা নিঝুম

১৮ অক্টোবর ২০১১

সত্তরের দশকে কুমিল্লা মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের আন্দোলনকে বেগবান করেছেন সাহসী নারী বেগম গুল ফেরদৌস নিঝুম৷ পাক সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে সাঁতরে গোমতী নদী পেরিয়েছেন৷ ভূমিকা রেখেছেন মুক্তিসেনাদের পাশে থেকে দেশমাতৃকার মুক্তিতে৷

https://p.dw.com/p/12tZs
বেগম গুল ফেরদৌস নিঝুমছবি: Falam Ullash

‘‘স্কুল জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি আমার ঝোঁক ছিল৷ তবে সেসময়ে স্কুল পর্যায়ে রাজনীতি ছিল না বললেই চলে৷ সেকারণে কুমিল্লা মহিলা কলেজে ভর্তির পর থেকে আমার সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করার সুযোগ হয়৷ ফলে কলেজে ছাত্রলীগের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ি৷ ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর স্নাতক শ্রেণীতে উঠে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করি৷ ভোটের মাধ্যমে ছাত্রলীগ থেকে ভিপি তথা সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই৷ তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরুর বেশ আগে থেকেই আমরা কলেজে এবং কুমিল্লা শহরে মিছিল-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছিলাম৷ যদিও সেসময় মেয়েদের জন্য পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এসব কাজ করার মতো সুযোগ ও স্বাধীনতা যথেষ্ট ছিল না৷ তবুও আমরা আন্দোলনের সামনের সারিতে থেকে সেসময় ভূমিকা রেখেছি৷ আমরা একদিন গাড়ি নিয়ে সেনানিবাসের দিকে যাচ্ছিলাম৷ গাড়িতে মাইকসহ আরো কিছু কাগজ-পত্র ছিল৷ পাক সেনারা গাড়িটি আটকে দেয়৷ মাইকসহ তার ও যন্ত্রাংশ নষ্ট করে দেয়৷ এছাড়া গাড়ির চালককে মারধর করে৷ আমাদের গাড়ি থেকে এক পুরুষ সহকর্মীকে ধরে টেনে নিয়ে যায়৷ আমরা ভয়ে কাঁপছিলাম৷ তবে ঐ সহকর্মীর স্ত্রী কিছুদিন পাকিস্তানে থাকায় উর্দু জানতেন৷ তাই তিনি উনাদের নানাভাবে বোঝানোর ফলে সেই যাত্রা আমরা রক্ষা পাই৷''

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরুর দিনগুলোর কথা এভাবেই ডয়চে ভেলের কাছে তুলে ধরেন কুমিল্লার নারী নেত্রী বেগম গুল ফেরদৌস নিঝুম৷ যুদ্ধ শুরুর মাত্র দু'দিন পরেই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েন তিনি৷ সেদিনের ঘটনা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবার বাসা কুমিল্লার পুরাতন চৌধুরী পাড়ায়৷ সেখানে বাবার বাসার বেশ কাছেই টিঅ্যান্ডটি ভবনে প্রথম পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প হয়েছিল৷ ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরুর দু'দিন পরই তারা আমার বাবার বাড়িতে হানা দেয়৷ আমি তখন বাসায় ছিলাম৷ পাক সেনাদের আসার খবর পেয়ে আমি এবং আমার বড় ভাই গোমতী নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ি৷ বাসার পাশেই ছিল নদীটি৷ সেটি খুব বেশি খরস্রোতা ছিল না৷ তাছাড়া আমি বেশ ভালই সাঁতার কাটতে পারতাম৷ আমরা দু'জনে সাঁতার কেটে নদীর অপর পাড়ে গিয়ে উঠি৷ ওপার খানিকটা নিরাপদ ছিল৷ কিন্তু সেই যে বাড়িছাড়া হলাম৷ দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত আর বাড়ি ফেরা হয়নি৷''

Unabhängikeitsfeier in Bangladesh
ভবিষ্যতের উজ্জ্বল বাংলাদেশের স্বার্থে অনেক নারী-পুরুষ দিয়েছিলেন আত্ম বলিদানছবি: AP

১৯৫৪ সালের সেপ্টেম্বরে জন্ম গুল ফেরদৌসের৷ কুমিল্লায় নিঝুম নামে তিনি পরিচিত৷ বাবা মোহাম্মদ ইলিয়াস এবং মা রাবেয়া খাতুন৷ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর গোমতী নদীর ওপারে নন্দীরবাজারে এক সপ্তাহ মতো থেকে ভারত যান৷ তবে পরে তিনি গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় ফিরে আসেন এবং সেখানে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করেন৷ যুদ্ধের সময় গোলাগুলির মধ্যেই নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরিয়ে তিনি গ্রামে পৌঁছেন৷ নবীনগর থানায় প্রত্যন্ত গ্রামের ভেতরে নানার বাড়িতে অবস্থান করেন গুল ফেরদৌস৷

একেবারে নিঝুম গ্রামে হওয়ায় সেই বাড়িতে কখনও পাক সেনা কিংবা রাজাকাররা হানা দেওয়ার কথা ভাবেনি৷ এছাড়া ঐ গ্রামের সাথে শহরের যোগাযোগের সকল পথও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ তাই শত্রুসেনাদের হানা থেকে সেটি মুক্ত ছিল বলে জানান গুল ফেরদৌস৷ সেখানে ভারত থেকে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে অভিযানে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিতেন৷ খাবার ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতেন৷ মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে অস্ত্র রেখে প্রয়োজন মতো ঘুরে অভিযানের পরিকল্পনা করতেন৷ আবার পরিকল্পনা মাফিক সেখান থেকে অভিযানের জন্য বেরিয়ে পড়তেন৷ মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল সেই বাড়ি৷

দেশ স্বাধীন হলে কুমিল্লা ফিরে আসেন এবং আবারও লেখাপড়া শুরু করেন নিঝুম৷ আবারও ছাত্র রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেন এবং সদ্য স্বাধীন দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন৷ শিক্ষাজীবন শেষ করে টেলিফোন দপ্তরে চাকুরি নেন তিনি৷ পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকেন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড৷ প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের জন্য বিশেষ প্রতিষ্ঠান ‘পরশ' এর সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন তিনি৷ মানবাধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী পরিষদের সদস্য গুল ফেরদৌস নিঝুম৷ এছাড়া মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান