ফ্রিজারে করোনা রোগীর মৃতদেহ
২ জুলাই ২০২০করোনা কালে একের পর এক ভয়াবহ দৃশ্যের সাক্ষী হচ্ছে কলকাতা। বুধবার তেমনই এক ঘটনা ঘটল আমহার্স্ট স্ট্রিট অঞ্চলে। ৭১ বছরের করোনা রোগীর মৃতদেহ বাড়িতে ফ্রিজ ভাড়া করে রাখতে হলো পরিবারকে। কারণ, করোনায় মৃত ব্যক্তির সৎকার কী ভাবে হবে সে বিষয়ে তথ্য পেতে গোটা এক দিন সময় লেগে গেল। দেহের দায়িত্ব নেয়নি পুলিশ প্রশাসন।
গত শনিবার থেকে জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন আমহার্স্ট স্ট্রিট অঞ্চলের ৭১ বছরের ওই বৃদ্ধ। সোমবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় মারওয়ারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তাঁকে করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। সেই মতো করোনা পরীক্ষাও হয়। কিন্তু বিকেলের দিকে বৃদ্ধের শরীর আরও খারাপ হয়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পরিবারের বক্তব্য, বৃদ্ধের করোনা হয়েছে, না কি হয়নি, এ বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। করোনা রোগীর সৎকারের ভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে মৃতদেহ নিয়ে তাঁরা স্থানীয় একটি মর্গে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু মর্গ কর্তৃপক্ষ দেহ নিতে অস্বীকার করে। পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। অভিযোগ, পুলিশ কোনও রকম সহায়তা করেনি। এমন অবস্থায় মধ্য এবং দক্ষিণ কলকাতার আরও দুইটি মর্গে দেহ রাখার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু সফল হতে পারেননি। এ দিকে মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরাও মুশকিল। পাড়া প্রতিবেশী আপত্তি জানাতে পারেন। অগত্যা পাড়ার ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাড়িতেই ফিরিয়ে আনা হয় মৃতদেহ। ফ্রিজারের বন্দোবস্ত করে তার মধ্যে রাখা হয় দেহ।
পরদিন কোভিড রিপোর্ট পাওয়ার পরে তা নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশের কাছে। অভিযোগ, পুলিশ দুই দিন ধরে পরিবারটিকে কোনও রকম সাহায্য করেনি। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে পৌঁছনোর পরে পুরসভা নড়েচড়ে বসে এবং শববাহী গাড়ি পাঠায়।
সাধারণত করোনায় মৃত্যু হলে প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে মৃতদেহের সৎকারের ব্যবস্থা করে। নিয়ম মতো পুলিশকে খবর দিলে তাদেরই সমস্ত ব্যবস্থা করার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশ দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে পুরসভার উপর। পুরসভা স্বাস্থ্য দফতরের উপর। মাঝখান থেকে প্রায় দুই দিন ধরে নাজেহাল হতে হলো মৃতের পরিবারকে। পরিবারের এক সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁদের অর্থ ছিল তাই ফ্রিজার এনে মৃতদেহ রক্ষা করতে পেরেছেন, যাঁদের সেই সামর্থ নেই, তাঁদের কী হবে?
পুলিশ অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, মৃতের পরিবার সময় মতো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চলতেই থাকবে। কলকাতাও একের পর এক ভয়াবহতার সাক্ষ্য বহন করে চলবে।
এসজি/জিএইচ (আবপ)