1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুধু করোনায় রক্ষা নেই, এ বার এলো ডেঙ্গু

১৫ জুন ২০২০

করোনার পাশাপাশি এ বার ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। যা নিয়ে নাজেহাল অবস্থা প্রশাসনের। হাসপাতালে মিলছে না বেড।

https://p.dw.com/p/3dloh
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে ভারতে। পশ্চিমবঙ্গেও। তারই মধ্যে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। অভিযোগ, করোনা-কালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা। শুধু তাই নয়, ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুত নয় রাজ্যের পুরসভাগুলি।

গত বছর জুন মাসের এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬৮২ জন। এ বছর সংখ্যাটি সামান্য কম, ৫৭৩ জন। কিন্তু কলকাতা, হাওড়া সহ বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে উত্তরবঙ্গের মালদাতেও। কিন্তু হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে পারছেন না সকলে। কারণ একটাই, করোনা। রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল করোনা হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ, সেখানে অন্য রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, পাওয়া যাচ্ছে না রক্তও। অথচ ডেঙ্গুর চিকিৎসায় রক্ত অত্যন্ত জরুরি। কারণ, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ডেঙ্গু হলে প্লেটলেট কমতে শুরু করে। রক্ত দিয়ে প্লেটলেটের অভাব পূরণ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর আরও একটি সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে। একই রোগীর শরীরে করোনা এবং ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এমন দু'জনকে শনাক্তও করা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, কলকাতায় এমন এক রোগীর মৃত্যুও হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্ম থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত ডেঙ্গুতে নাজেহাল অবস্থা হয় পশ্চিমবঙ্গের। গত দুই বছর কার্যত মহামারির চেহারা নিয়েছিল এই রোগ। একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে, বর্ষার গোড়ায় মশা মারার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেনি পুরসভা। পরিষ্কার করা হয়নি নর্দমা এবং খাল। বাড়ি বাড়ি ঘুরে জল জমছে কি না, তাও দেখা হয়নি। পুরসভা এবং প্রশাসন অবশ্য তা মানতে চায়নি। বলা হয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও অভিযোগ থামেনি। বার বার বলা হয়েছে, প্রশাসন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা গোপন করেছে।

এ বছর সেই একই অভিযোগ উঠেছে সরকারের বিরুদ্ধে। তবে করোনা নিয়ে। সরকার তথ্য গোপন করছে বলে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতর্কের পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন রাজ্যবাসী। হাসপাতাল, সরকার এবং পুরসভা করোনা নিয়ে এতটাই নাজেহাল যে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোনও কোনও পুরসভার কাছে মশা মারার তেল পর্যন্ত নেই বলে জানা যাচ্ছে। যদিও প্রশাসন এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

করোনা সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে রাজ্যে। দীর্ঘ দুই মাস লকডাউন থাকার পরে সব কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। যার ফলে করোনার সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। তারই মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটায় চিন্তা অনেকটাই বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার কারণে বেসরকারি হাসপাতালগুলিও রোগী ভর্তি করতে চাইছে না। প্রতি বছরই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লে হাসপাতালগুলিতে আর জায়গা পাওয়া যায় না। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে বেডের ব্যবস্থা করতে হয়। করোনার কারণে এ বার প্রথম থেকেই সেই অবস্থা। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ চেহারা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অগত্যা উপায়? বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, হাসপাতালগুলিকে পুরোপুরি কোভিড হাসপাতালে পরিণত না করে, আলাদা কোভিড ওয়ার্ড তৈরি করলে অন্য রোগের চিকিৎসা করাও সম্ভব। কিন্তু সেখানেও মুশকিল আছে। পরিসংখ্যান বলছে, জুলাইয়ের শেষ পর্যায়ে রাজ্যে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বহু গুণ বাড়বে। এই মুহূর্তে রাজ্যের হাসপাতালগুলির মোট বেড সংখ্যার থেকে যা অনেক গুণ বেশি। ফলে স্টেডিয়াম, হল এমনকী, হোটেলগুলিকেও চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। ফলে ইতিমধ্যেই যে হাসপাতালগুলিকে কোভিড হাসপাতাল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলিকে সাধারণ রোগার জন্য খুলে দিলে মুশকিল। কিন্তু একই সঙ্গে ডেঙ্গুরও যে চিকিৎসা প্রয়োজন, সেটাও বুঝতে পারছে প্রশাসন। কিন্তু স্থায়ী কোনও সিদ্ধান্তে এখনও পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব হয়নি।

এসজি/জিএইচ (আবপ, পিটিআই)