ফ্রাংকফুর্টের জিহাদি মামলা – উত্তরের চেয়ে প্রশ্ন বেশি
৩১ অক্টোবর ২০১৪আদালতে বসে অসহায়ভাবে চেয়ে রইলেন তাঁরা৷ প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে শুনানির পরেও বিচারক, সরকারি কৌঁসুলি ও সাংবাদিকরা নতুন কিছুই জানতে পারলেন না৷ অভিযুক্তের নাম ক্রেশনিক, বয়স ২০৷ সে প্রায় ৬ মাস সিরিয়ায় আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করেছে৷ মুখ খুলতে তার আপত্তি ছিল না৷ কিন্তু তার বক্তব্য ছিল তাচ্ছিল্য ও উদাসিনতার এক অদ্ভুত মিশ্রণ৷ ফলে উত্তর পাবার বদলে আরও অনেক নতুন প্রশ্ন মনে জাগলো৷
কসোভো থেকে আসা এই তরুণকে জার্মানিতে কে ব়্যাডিকাল ভাবধারার দিকে ঠেলে দিয়েছে? কে তাকে সিরিয়া যেতে সাহায্য করেছে? সেখানে তার সময় কেমন কেটেছে? জার্মানিতে ফিরতে কে তাকে সাহায্য করেছে? ক্রেশনিক তার প্রায় কিছুই মনে করতে পারছে না৷ মনে হচ্ছে, সে আসলে কারও নাম বলতে চায় না৷ সেটা কি আনুগত্যের কারণে? নাকি সে সতীর্থদের প্রতিশোধের ভয় করছে? সেই প্রশ্নও অমীমাংসিত রয়ে গেল৷
আত্মীয়স্বজনের বিড়ম্বনা
ক্রেশনিক-এর ছোট ছোট বাক্যগুলি পরস্পর-বিরোধিতায় ভরা৷ আদালতে দর্শকের আসনে বসে ছিলেন তার পরিবারের হতাশ সদস্যরা – বাবা, মা, দুই বোন৷ শুধু জানা গেছে, তাদের চাপেই ক্রেশনিক আদৌ কর্তৃপক্ষের কাছে মুখ খুলেছে৷
ক্রেশনিক-এর কথাবার্তা শুনলে ‘দৈন্য' শব্দটি মনে আসে৷ হয়তো সেটাও একটা উত্তর৷ যে সব তরুণ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, ব়্যাডিকাল ইসলামপন্থিরা তাদের দলে টানার চেষ্টা করে৷ ক্রেশনিক জানিয়েছে, ২০১১ সালের আগে সে নাকি আদৌ ধার্মিক ছিল না৷ সেইসঙ্গে ছিল বড় মাপের অ্যাডভেঞ্চারের হাতছানি৷ কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করার কোনো উপায় ছিল না৷ তার মনে হয়েছিল, সিরিয়ায় আরব জিহাদিদের জোরালো কণ্ঠ রয়েছে৷ তাছাড়া ইউরোপীয়দের উপর ভরসা করা কঠিন৷ এ সব কথা বলার সময়ে মনে হচ্ছিলো, ক্রেশনিক যেন প্রায় অপমানিত বোধ করছে৷ কম্পিউটার গেমস খেলে খেলে মনে যে স্বপ্ন জেগেছে, আইএস মিলিশিয়া যেন তারই ‘এক্সটেনশন'৷
আসল বিষয়ে ধোঁয়াশা থেকে গেল
ঠান্ডা মাথায় বিচারপতির নানা চেষ্টা সত্ত্বেও বলতে হয়, তরুণ জার্মানরা কেন যে সর্বনাশা খুনের খেলার অংশ হতে চায়, সেই বিষয়ে ধোঁয়াশা থেকে গেল৷ পুলিশে, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার মনেও সেই একই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে৷ যে সব জার্মান তরুণ যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছে, প্রতিদিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে৷ কোন বিষয় তাদের উদ্বুদ্ধ করছে, তা আগের মতোই অস্পষ্ট৷ সে কারণেই এই প্রবণতা এত বিপজ্জনক৷