জার্মানিতে সালাফিদের নিয়ে কী করা যায়?
৩০ অক্টোবর ২০১৪সে নিজের পরিবারের সদস্যদেরও খুন করতে প্রস্তুত, যদি ‘‘তারা ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়৷'' ক'দিন আগে এরহান জার্মানির ‘স্যুডডয়চে সাইটুং'-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছিল৷ ২২ বছর বয়সি এই তরুণ সালাফি হিসেবে নিজের পরিচয় গোপন করে না৷ সে আবার আইএস-এরও অনুগামী৷ তার তুরস্ক বংশোদ্ভূত পরিবার বাভেরিয়ায় বসবাস করে৷ তবে ‘বিজনেস ইনফরমেশন সিস্টেম'-এর এই ছাত্র পরিবারের সঙ্গে থাকে না৷ অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাকে জার্মানি ছাড়তে হয়েছে৷ বাভেরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াখিম হ্যারমান তাকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক' হিসেবে গণ্য করেন৷ তাই এরহান-কে তুরস্কে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে৷
সালাফিদের সংখ্যা বাড়ছে
জার্মানিতে এরহান-এর মতো মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা কয়েক'শ বলে অনুমান করা হয়৷ তাদের অনেকেই সালাফি মতবাদের খাতিরে হিংসার আশ্রয় নিতে প্রস্তুত৷ তারা মূলত তরুণ এবং জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধের প্রতি আসক্ত৷ কয়েক বছর আগেও জার্মানিতে সালাফির সংখ্যা ছিল প্রায় ২,০০০৷ আজ সেই সংখ্যা প্রায় ৬,৩০০৷ জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হান্স-গেয়র্গ মাসেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘এই সংখ্যা অতি দ্রুত বাড়ছে, যা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়৷''
মাসেন-এর সূত্র অনুযায়ী কমপক্ষে ৪৫০ জন মানুষ জার্মানি থেকে সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধ করতে গেছে৷ তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ জন আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে৷ তাঁর হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৫০ জন জিহাদি সিরিয়া ও ইরাক থেকে জার্মানিতে ফিরে এসেছে৷
জিহাদিদের সঙ্গে কী করা উচিত?
জার্মানিতে এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে জোরালো বিতর্ক চলছে৷ জঙ্গিদের কি দেশ ছেড়ে বেরোতে দেওয়া উচিত এবং আত্মঘাতী হামলা চালাতে দেওয়া উচিত? নাকি তাদের আটকে দিয়ে পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া উচিত? নাকি তাদের প্রত্যর্পণ করাই ঠিক কাজ?
জার্মানির নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এরই মধ্যে আইএস অ্যাক্টিভিস্ট সন্দেহে দু'শ-রও বেশি মানুষের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে৷ জার্মানির আইন বিষয়ক মন্ত্রী চলতি বছরের শেষের মধ্যেই কিছু প্রস্তাব পেশ করবেন৷ এর আওতায় হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালানোর উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার প্রচেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে৷
আরও কড়া পদক্ষেপের দাবিও শোনা যাচ্ছে৷ কেউ বলছেন, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির হয়ে প্রচারণা চালালেও শাস্তি দিতে হবে৷ তাদের মতে, সমস্যা মূলেই বিনাশ করা উচিত৷ ইসলামপন্থি সন্ত্রাসের ভিত্তি নষ্ট করতে হবে৷ যেসব সালাফির দুটি পাসপোর্ট রয়েছে, তাদের জার্মান পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে প্রত্যর্পণের দাবিও তোলা হচ্ছে৷ মসজিদ বা ইসলামি সংগঠনগুলির উপর আরও জোরালো নজরদারির প্রস্তাবও শোনা যাচ্ছে৷
যুদ্ধক্ষেত্র-ফেরত মানুষ নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি
নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষদের দুশ্চিন্তা হলো, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা সালাফিরা জার্মানিতে বড় হামলা চালাতে পারে৷ যেমন ব্রাসেলস-এ গত মে মাসে ইহুদি মিউজিয়ামে ৪ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল যে ফরাসি নাগরিক, সে সম্ভবত সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে গিয়েছিল৷
আরেকটি সমস্যা হলো, দেশ থেকে বেরোতে না দিলে সেই ব্যক্তি নিজেই ‘টাইম বোমা'র মতো হয়ে উঠতে পারে৷ ক্যানাডায় ৩২ বছর বয়স্ক আততায়ীর ঘটনা তারই এক দৃষ্টান্ত৷ সিরিয়ায় যাবার উদ্দেশ্যে সে কয়েক সপ্তাহ ধরে নিজের পাসপোর্ট ফেরত পাবার চেষ্টা করছিল৷
জার্মানিতে অনেক বছর ধরে হিংসাত্মক ইসলামপন্থিদের দেশ ছাড়তে বাধা দেওয়া হয়নি৷ তবে সম্প্রতি ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা নানা উপায়ে তাদের সেই কাজে বিরত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন৷
আগাম প্রতিরোধ জরুরি
ফ্রাংকফুর্ট শহরে জার্মানির প্রথম সালাফিবাদের বিরুদ্ধে ‘কাউন্সিলিং' কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের মতে, শুধু নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ এই ব়্যাডিকাল ইসলামি ভাবধারার মোকাবিলা করতে পারে না৷ তরুণদের এই ভুল পথে নামার আগেই বিরত করতে চাই পরামর্শের ব্যবস্থাও৷
জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মাসেন বলেছেন, জার্মানিতে যারা জিহাদিদের দলে যোগ দেয়, তাদের একটা বড় অংশকে চারটি ‘এম' দিয়ে বর্ণনা করা যেতে পারে – ‘‘মেল (পুরুষ), মুসলিম, মাইগ্রেশন ব্যাকগ্রাউন্ড (অভিবাসী) এবং কিশোর বয়সে, স্কুলে বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে মিস-অ্যারফল্গ (ব্যর্থতা)৷''
এরহান-এর মতো তরুণদের কাহিনি সত্যিই সে রকম৷ তুরস্কে জন্মগ্রহণের পর প্রায় ২০ বছর বাভেরিয়ায় নিজের বাবা-মা'র সঙ্গে সে থেকেছে৷ নিজের শহরে সালাফিদের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিল৷ ২০১৩ সালের শেষে তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় প্রবেশ করার চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয়৷ জার্মানিতে ফিরতেই তার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়৷ তারপর দেশ থেকেই বহিষ্কার করা হয়৷