বাচ্চু, রহমান ও হিন্দি গান
১৪ মার্চ ২০১৪ঢাকায় বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ‘সেলিব্রেশন কনসার্টে' সংগীত পরিবেশন করেন আইয়ুব বাচ্চু, এ আর রহমান, অ্যাকনসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী৷ তবে জমকালো এই অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্কও চলছে অনেক৷ অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি শিল্পীদের বদলে ভারতীয় শিল্পীদের অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ধরে নিলাম এ আর রহমান, অ্যাকনসহ যাঁরা এসেছেন তাঁরা অনেক নামি-দামি শিল্পী৷ তাঁরা এ দেশে এসেছেন, আমাদের উচিত তাঁদের সম্মানিত করা যাতে আমাদের সম্বন্ধে তাঁরা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন৷ এতে কি কেউ আপত্তি করছে? একজন মেহমানকে সম্মান জানাতে হলে কি নিজের ছেলে-মেয়েকে অপমান করতে হবে? মেহমানকে চেয়ারে বসতে দিয়ে কি নিজের সন্তানকে ফ্লোরে বসতে দিতে হবে? কেনো, একাধিক চেয়ার হলে সমস্যা কোথায়? দুটো এসি গ্রিনরুম হলে সমস্যা কোথায়? একই সাউন্ড সিস্টেমে আমাদের লিজেন্ডরা গাইলে সমস্যা কোথায়?''
ইমরান তাঁর ফেসবুক পোস্টে অনেক প্রশ্ন রেখেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘বুঝলাম, আন্তর্জাতিক আয়োজন অন্য ভাষার লোকেরাও অংশগ্রহণ করবে৷ এটা কি বিশ্বকাপ উদ্বোধনীর প্রথম আয়োজন? অন্য দেশ গুলোর আয়োজন কি আমরা দেখিনি? আমরা কি দেখিনি তারা নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতিকে কিভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এ ধরনের আয়োজনে? তাহলে আমরা দিলে কি মহাভারত অন্যায় হয়ে যেত?''
সাংবাদিক সুপ্রীতি ধরও ফেসবুকে একই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন৷ তাঁর লেখার একাংশ এরকম, ‘‘আসলে সমালোচনা করছে পুরো আয়োজনটা নিয়ে৷ এখানে এ আর রহমান কোনো ফ্যাক্টর না৷ আমার নিজের দেশের মাটিতে একটা আয়োজন হচ্ছে, সেখানে আমাদের শতভাগ স্বাধীনতা ছিল নিজেদের তুলে ধরার, সেই দীনতাটাই প্রকাশ পেয়ে গেল খুব করে৷ আমরা নিজেদেরকে কতটা দেউলিয়া করে তুলছি দিনের পর দিন, নিজের সংস্কৃতি কতভাবে মার খেয়ে যাচ্ছে, তারই প্রকাশ ঘটলো কাল৷''
বৃহস্পতিবার রাতের অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সময় আইয়ুব বাচ্চুর এক মন্তব্যও ফেসবুকে ঝড় তুলেছে৷ প্রিয় ডটকমে বাচ্চুর মন্তব্য প্রকাশ হয়েছে এভাবে, ‘‘আপনারা যাঁরা বাংলা গান শুনছেন তাঁদের অনেক ধন্যবাদ৷ আপনাদের হাত না চলুক, চোখ আর কান তো খোলা আছে? এতেই চলবে, হাততালি এখন খরচ করে লাভ নেই, এটা পরের জন্য রেখে দিন, চোখ-কান খোলা আছে এটাই যথেষ্ট, আপনারা ধৈর্য ধরে বাংলা গান শুনছেন, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ, আর একটি গান গাইবো কেবল৷''
এদিকে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মূল পর্বে দীর্ঘ সময় হিন্দি গান বাজানোকে ‘বাংলা ভাষার উপর হিন্দির আগ্রাসন' মনে করছেন ব্লগার মিজানুর রহমান মিলন৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে তিনি লিখেছেন, ‘‘হিন্দির আগ্রাসন তখনই ব্যর্থ হবে যখন আমরা বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে আরো বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ হবো৷ আর এটার শেষ তখনই হবে যখন বাংলা অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকবে বা অন্তত ভারতের সমকক্ষ হবে৷''
বাংলাদেশে হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসন ঠেকানো আদৌ সম্ভব কিনা – তা নিয়ে সন্দিহান লেখক ব্রাত্য রাইসু৷ ফেসবুকে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসন ঠেকানো কি আসলে সম্ভব? সারাদিন টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল আর কার্টুন দেখাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেলে সরকার টিকবে? মনে হয় না৷''
রাইসু লিখেছেন, ‘‘বিসিবি ঠিকই বাংলাদেশের লোকদের নাড়িটা ধরতে পারছিল৷ বাংলাদেশের শিল্পীদের গুরুত্ব যদি বিসিবি না দেয় তারা এইটা ভুলে দেয় নাই ভাবার কারণ নাই৷ তারা আপনাদেরকে বাংলাদেশের হিন্দি সংস্কৃতির ধারক-বাহকদের তরফ থিকাই রিজেক্ট করছেন৷ যদি নিজেদের অধিকার চান তো বাসাবাড়ির হিন্দি কাতরতা কমান৷ চাবিটা হিন্দি চ্যানেলের মধ্যে৷ আপনারা আসলে জাস্ট নাই হইয়া গেছেন৷''
সংকলন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ