‘‘খেলা আর রাজনীতি’’
৩ মার্চ ২০১৪সামহয়্যার ইন ব্লগে মো: মাইদুল ইসলাম সা'দ তাঁর পোস্টে দর্শকদের পাকিস্তান সমর্থন করাকে কষ্টেসৃষ্টে মেনে নিলেও পতাকা বহন করাটা সমর্থন করতে পারেননি৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘...পাকিস্তানকে সমর্থন করছে, সেটাও না হয় কষ্টেসৃষ্টে মেনে নেওয়া গেল৷ কিন্তু পতাকা থাকবে কেন? কেন মুখ আঁকবে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার রঙে? কাল ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিবস৷ ১৯৭১ সালের ২ মার্চ পাকিস্তানি পতাকাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে উত্তোলিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা৷ তার ৪৩তম বার্ষিকীতে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে এই উল্লাসনৃত্য দেখতে আর লিখতে বড় লজ্জা লাগছে!''
এরপর মাইদুল ইসলাম সা'দ ভারতীয় পতাকা বহন প্রসঙ্গে লেখেন, ‘‘পাকিস্তানি পতাকার মতো আবেগকে অত আক্রান্ত হয়ত করে না, তবু ভারতের পতাকা নিয়ে নাচানাচিও নিশ্চয় গ্রহণযোগ্য নয়৷ আর এখন তো অবশ্যই নয়, যখন ভারতীয় বোর্ডের ‘বিগ থ্রি' জাতীয় একটা অদ্ভুত ফর্মুলায় বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাসই যেতে বসেছিল!''
সেজান মাহমুদ স্টেডিয়ামের দর্শকদের হাতে ভারত-পাকিস্তানের পতাকা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘...পৃথিবীর যত খেলায় আমরা পতাকা দেখি তা নিজ নিজ দেশের নাগরিকেরা নিজ নিজ দেশের পতাকা ধারণ করে৷ অন্য দেশ বা দলকে সাপোর্ট করলেও কেউ অন্য দেশের পতাকা বহন করে না৷ রাষ্ট্রীয় পতাকার এই মর্যাদা রক্ষার জন্যে মানুষ বুকে হাত দিতে প্রতিজ্ঞা করে, জীবন বাজি রেখে হলেও নিজ দেশের পতাকাকে ধারণ করবো৷ আমার মনে হয় এই বিষয়টা এত হালকা করে দেখার অবকাশ নেই৷....রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকার প্রতি এই আনুগত্য এবং শ্রদ্ধাকে ছোট করে দেখার উপায় নেই, একটু ভেবে দেখবেন কি সবাই?!!!''
আশরাফুল আলম খোকন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘খুব জনপ্রিয় বচন, খেলার সাথে রাজনীতি মেলানো ঠিক না! এই কথার সাথে আমি পুরোপুরি একমত! বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় শুধু আমরা না, সারা বিশ্বজুড়ে কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা, হল্যান্ড, জার্মানি, ইংল্যান্ড – নানা রকমের সমর্থক থাকে! ভিনদেশি হলেও আমরাও অনেকেই গালে, মুখে, বুকে, হাতে, ওদের ফ্ল্যাগ আঁকি, বাড়িতে ফ্ল্যাগ উড়াই, জয়ে পরাজয়ে উন্মাতাল, হতাশ হই! এটা নিখাদই একটা আনন্দ! ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও বিষয়টা এইরকমই! তুলনামূলকভাবে আমাদের দেশে পাকিস্তান ও ভারতের সমর্থকই বেশি! এদের জয় নিয়েও ভক্তরা উন্মাতাল, পতাকা উড়াবে এটাই স্বাভাবিক! তবে আমার আপত্তি পাকিস্তানের ক্ষেত্রে! পাকিস্তানের বিষয়ে আপত্তি করলে আমি মনে করি না এখানে রাজনৈতিক কারণ মিলানো উচিত! কারণ এই পাকিদের বিরুদ্ধে আমরা ২৪ বছর সংগ্রাম করেছি একটি পতাকার জন্য! ওরা আমাদের লাল সবুজের পতাকাকে পদদলিত করেছে বার বার! আমাদের ৩০ লক্ষ সজনকে হত্যা করেছে৷ আমার মা, বোনদের ধর্ষণ করেছে এই কুলাঙ্গার জাতিটি! সম্প্রতিও ওরা (ক্রিকেটার ইমরান খান সহ) আমাদের পতাকাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, ওদের সংসদে আমার দেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব এনেছে! আর আমরা কতটা নির্লজ্জ হলে ওই পাকি পতাকা নিয়ে লাফাই, ওদের পক্ষ নিয়ে তর্ক করি! আমি মনে করি, পাকিদের নিন্দা করার মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই! ওদেরকে ঘৃণা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিকের কর্তব্য!''
আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক স্ট্যাটাসে খেলা আর রাজনীতি বিষয়ক যে প্রশ্নটি উঠে এসেছে, সে প্রসঙ্গে সামহয়্যার ইন ব্লগে রাকীব হাসানের একটি পোস্ট রয়েছে৷ সেটার শিরোনামই হচ্ছে, ‘‘খেলা আর রাজনীতি এক হতে বাধ্য''৷ এই পোস্টে রাকীব বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসানের একটি মন্তব্যের উল্লেখ করেছেন৷ রকিবুল একসময় বলেছিলেন, ১৯৭০-৭১ সালে তিনি একমাত্র বাঙালি খেলোয়াড় হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন৷ সেসময় তিনি ব্যাটে ‘জয় বাংলা' লেখা একটি স্টিকার লাগিয়েছিলেন৷ টিম ম্যানেজমেন্ট এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টা খুলে বলেন৷ যে কারণে পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁকে দেখামাত্র গুলি করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল বলে জানান রকিবুল হাসান৷
ব্লগার রাকীব হাসান তাঁর পোস্টে রকিবুল হাসানের ঘটনাটা উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন, ‘‘...তাহলে বলেন, তখন কেন খেলা আর রাজনীতিকে এক করা হয়েছিল? আসলে খেলা আর রাজনীতি এক হতে বাধ্য৷ কারণ এটা শুধুমাত্র খেলা না, এর সাথে জড়িয়ে থাকে আমাদের দেশপ্রেম৷''
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ