ফেলানী হত্যার রায়, ভারতের আদালতে চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি
৬ জুলাই ২০১৫২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বাবার সঙ্গে সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে দেশে ফিরছিল কুড়িগ্রামের কিশোরী ফেলানী৷ তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল দেশে৷ কিন্তু দালালদের সাহায্যে কাঁটাতারের বেড়ার সঙ্গে মই লাগিয়ে ফেলানী যখন সীমানা পার হওয়ার চেষ্টা করছিল, সেই সময়ে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাঁর সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি চালান৷ নিহত ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকে দীর্ঘক্ষণ৷ পরে বিএসএফ নিজেই তার বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে৷ আইন অনুযায়ী, বিএসএফ তাদের নিজের আদালতেই বিচার করে ২০১৩ সালে অমিয়কে নির্দোষ বলে রায় দেয়৷ পরবর্তীতে বিএসএফ মহাপরিচালক সেই রায়ের পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেন৷ আর গত বৃহস্পতিবার, সেই রায়ই বহাল রেখে অমিয়কে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ ও ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে৷
এই মামলার আইনজীবী বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম আদালতের পিপি আব্রাহাম লিংকন ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘মামলার রিভিউ চলাকালে আমি এবং ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ভারতের বিএসএফ আদলাতে উপস্থিত ছিলাম৷ আমাদের তখনই সন্দেহ হয়েছিল৷ কারণ ২০১৩ সালে যে বিচারকরা বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছিলেন, তাঁরাই রিভিউয়ের বিচারক ছিলেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘রায়ে বিএসএফ-এর সদস্য যে ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করেছেন, তা প্রমাণিত৷ তবে আদালত মনে করছে যে, আত্মরক্ষার জন্য বিএসএফ সদস্য গুলি করতে বাধ্য হয়েছেন৷ কিন্তু একজন নিরস্ত্র কিশোরী কীভাবে একজন বিএসএফ সদস্যের জীবনের হুমকি হলো, সেই ব্যাখ্যা নেই রায়ে৷''
আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘‘এই রায় গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিএসএফ হয়ত তাদের সদস্যদের মনোবল অটুট রাখতে এই রায় দিয়েছে৷ তারা ভারতীয় সংবিধানে জীবনরক্ষার অধিকারকে আমলে নেননি৷''
ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)-এর প্রধান কিরীটি রায় এরইমধ্যে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তারা ফেলানী হত্যার রায়কে চালেঞ্জ করতে উচ্চ আদালতে যাবেন৷ তিনি আরো বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে বলেছে যে, কোথাও কোনো অন্যায়-অবিচার হলে যে কেউ প্রতিকার চাইতে আদালতে আসতে পারে৷ বিএসএফ-এর নিজস্ব আদালতের রায় ভারতের সংবিধান আর ন্যায়বিচারের পরিপন্থি৷''
মাসুম-এর পক্ষ থেকে এরইমধ্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে৷ আসক -র পরিচালক নূল খান ডয়চে ভেলেক জানান, ‘‘ফেলানী হত্যার ব্যাপারে যাতে তার পরিবার ন্যায়বিচার পায়, সেজন্য আমরা ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম-এর সঙ্গে কাজ করছি৷ আমরা মামলার কাগজপত্র এবং ফেলানীর বাবার লিখিত সম্মতি ভারতের মানবাধিকার সংগঠনের কাছে পাঠিয়ে দেবো৷'' তিনি আরো জানান, ‘‘ফেলানীর বাবা এই মামলায় ভারতের উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ে সম্মত হয়েছেন৷''
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি আমার সন্তান হত্যার ন্যায়বিচার পাইনি৷ তাই ন্যায়বিচার পেতে আমাকে যাঁরা সহযোগিতা করবেন, আমি তাঁদের সঙ্গে আছি৷ আমার সঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন যোগাযোগ করেছে৷ আমি তাদের সম্মতি দিয়েছি৷ তারা দু-একদিনের মধ্যে লিখিতভাবে আমার সম্মতি নেবে৷''
তবে নূর খান বলেন, ‘‘এবার এই আইনি লড়াই চালাতে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারের মধ্যে সহযোগিতার ঐক্যমত হওয়া প্রয়োজন৷ অর্থাৎ ফেলানীর বাবাকে ভারত যেতে হবে৷ এ জন্য তাঁর ভিসাসহ আরো অনেক ‘ডকুমেন্ট'-এর প্রয়োজন পড়বে, মামলার কাগজ-পত্র লাগবে৷ তাই সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন৷''