বিএসএফ-বিজিবি বৈঠক
২২ আগস্ট ২০১৪ভারত ও বাংলাদেশের সুসম্পর্ক সামনে রেখে সীমান্ত নিরাপত্তা সমস্যার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বৃহস্পতিবার ২১শে আগস্ট থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে বিএসএফ ও বিজিবির ডায়রেক্টর জেনারেলের নেতৃত্বে চার দিনের বৈঠক, যা কিনা ভারতে সাধারণ নির্বাচনের কারণে মাস দুয়েক পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল৷
দু'পক্ষের শীর্ষ কর্তা-ব্যক্তিদের আলোচনায় দিল্লির পক্ষ থেকে উঠতে পারে বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ করার বিষয়৷ যদিও বাংলাদেশের হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর, ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যকলাপ কড়া হাতে দমন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে৷ ভারত তা স্বীকারও করেছে৷ তবে জঙ্গি শিবিরগুলি সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়েছে কিনা তা বলা শক্ত৷ এছাড়া যে বিষয়টা দু'দেশকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে, তা হলো সীমান্ত লাগোয়া উভয় দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি৷ সীমান্তে হামেশাই উভয় দেশে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি বিনিময়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি লেগেই আছে৷
সব থেকে উদ্বেগের বিষয় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, মাদক, অস্ত্রশস্ত্র ও নারী পাচার এবং অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার করতে গিয়ে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু৷ এর মধ্যে সব থেকে হৃদয় বিদারক ঘটনা ফেলানী খাতুনের হত্যা মামলা, যা নিয়ে দেশ বিদেশে বিতর্কের ঝড় বয়ে যায়৷
২০১১ সালের ৭ই জানুযারি কোচবিহাররের দিনহাটায় চৌধুরিহাট সীমান্তে ফেলানী ও তাঁর বাবা সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে গিয়েছিল৷ বাবা মই দিয়ে কাঁটাতার পার হয়৷ কিন্তু কিশোরী ফেলানী পার হতে গিয়ে ভারতের বিএসএফ-এর ১৮১ নং ব্যাটেলিয়ানের জওয়ান অমিয় ঘোষের রাইফেলের নিশানা থেকে বাঁচতে পারেনি৷ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রায় চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল তাঁর দেহ৷ তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করায় বিএসএফ-এর অমানবিক আচরণকে ধিক্কার জানিয়েছিল স্বদেশ ও বিদেশের বহু মানুষ৷ গ্রেপ্তার করে মামলা রুজু করা হয় অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে৷ পরে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়৷
চলতি বৈঠকে ঐ ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে বাংলাদেশ ফেলানী হত্যা মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের নিষ্ঠুর ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে দিল্লির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে৷ ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অন্য অভিযোগের মধ্যে থাকতে পারে ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কেন এত বেশি বাংলাদেশি মারা যায়৷ ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি বিএসএফ-এর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে তার মধ্যে ১৫ জন নাবালক৷ অন্যন্য বিষয়ের মধ্যে থাকতে পারে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে নির্মাণ প্রসঙ্গ এবং সীমান্তে দ্রোণ মোতায়েনের প্রস্তাবিত ভারতীয় পরিকল্পনা৷
দু'দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ষাণ্মাসিক বৈঠকের অতিরিক্ত জেলা শাসক স্তরে বৈঠকের প্রস্তবও আছে৷ বিজিবি-এর ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং বিএসএফ-এর ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেবেন্দ্র কুমার পাঠক৷