1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফের হাসপাতালে হেনস্থা, কর্মবিরতি চিকিৎসকদের

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কর্মবিরতি তুলে নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ফের নিশানায় নারী চিকিৎসকেরা৷ কলকাতার কাছেই এক সরকারি হাসপাতালে হেনস্থার মুখে পড়লেন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷

https://p.dw.com/p/4lC0I
Juniorärzte in Kolkata protestieren nach Angriff durch Patientenangehörige
ছবি: Satyajit Shaw/DW

এই ঘটনার পর কর্মবিরতিতে সেখানকার জুনিয়র চিকিৎসকরা৷ আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়েছেন চিকিৎসকরা৷ ৪২ দিনের বিরতির পর গত শনিবার থেকে কাজে ফিরেছেন তারা৷ এর ঠিক সাতদিনের মধ্যে চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হলেন কর্মক্ষেত্রে।

ওয়ার্ডে ঢুকে মারধর

উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি এলাকায় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ৷ সেখানে শুক্রবার বিকেলে সঙ্কটজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হয় এক রোগীকে৷ বছর তিরিশের রঞ্জনা সাউয়ের জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট ছিল৷

হাসপাতাল সূত্র অনুযায়ী, দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলেও তরুণীকে বাঁচানো যায়নি৷ কয়েকজন নারী চিকিৎসক অক্সিজেন দেন রোগীকে, অন্যান্য উপায়ে চেষ্টা করা হলেও কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান৷

মৃত্যুর পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মৃতার পরিজনেরা৷ তারা চড়াও হন মৃতার চিকিৎসায় যুক্ত চিকিৎসকদের উপর৷ তিন নারী চিকিৎসককে নিয়ে টানাটানি করতে থাকেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা৷ তাদের সঙ্গে থাকা প্রায় ১৫-২০ জন ঢুকে পড়েন ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে৷ নার্স, ওয়ার্ড বয়দের গায়ে হাত তোলা হয় বলে অভিযোগ৷

ঘটনার সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন চিকিৎসক ও নার্সরা৷ চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে রোগীর পরিজনেরা ক্ষোভ জানাতে থাকেন৷ শাসানি দেয়া হয় বলেও অভিযোগ৷ ‘আর একটা আরজি কর ঘটিয়ে দেয়া হবে' বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়৷

হাসপাতালের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজে কয়েকজন বহিরাগতকে দেখা গিয়েছে৷ নার্সের গায়ে হাত দেয়ার দৃশ্য উঠে এসেছে৷ সব জায়গায় সিসিটিভি না থাকায় ঘটনার পুরো ছবি পাওয়া যাবে না বলে জানান স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

মৃতার পরিবারের অভিযোগ, রোগীকে ইসিজি করতে নিয়ে যাওয়া হলেও অপেক্ষা করতে হয়৷ চিকিৎসক আসেননি৷ ততক্ষণে রঞ্জনার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়৷ গাফিলতি না হলে রোগীকে বাঁচানো যেত৷

এই অভিযোগ খারিজ করে সাগর দত্ত মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, ‘‘চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন৷ রোগীকে মৃতপ্রায় অবস্থায় আনা হয়েছিল৷ এখানে কোনো ভগবান নেই যে, তিনি প্রাণে বাঁচাবেন৷ চেষ্টা করার পরও এই অভিযোগ ওঠা দুর্ভাগ্যজনক৷''

কর্মবিরতিতে চিকিৎসকেরা

এই ঘটনার পরই সাগর দত্ত হাসপাতালের চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন, তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করবেন৷ শনিবার থেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন তারা৷ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন৷

এখনো বিচার পাননি কলকাতার হাসপাতালে অন্ধ হয়ে যাওয়া রোগীরা

৯ আগস্ট তরুণী চিকিৎসকদের দেহ উদ্ধার হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে৷ এর ৫১ দিনের মাথায় সাগর দত্ত মেডিক্যালের ঘটনা৷ চিকিৎসকদের প্রশ্ন, সাত সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কেন হাসপাতালে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা গেল না?

গত ১৬ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আর জি করের জুনিয়র চিকিৎসকদের চূড়ান্ত বৈঠক হয়৷ তারপর মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, সব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে৷ মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটির কথা বলেন তিনি৷

প্রশাসনিক স্তরে উদ্যোগ শুরু হলেও সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা এখনো ঢিলেঢালা৷ পুলিশ ক্যাম্প সব হাসপাতালে থাকলেও তাতে চিকিৎসকরা সুরক্ষিত বোধ করছেন না৷ সাগর দত্ত হাসপাতালে পুলিশের সামনেই নিগ্রহের শিকার হন নারী চিকিৎসক ও নার্সরা৷ প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের বাধা পেরিয়ে কীভাবে ফিমেল মেডিসিন বিভাগে পৌঁছে গেল বহিরাগতরা?

শনিবার সাগর দত্ত মেডিক্যালে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক হয়৷ স্বাস্থ্য সচিব বৈঠকের পর আশ্বাস দেন, নিরাপত্তা বাড়ানো হবে৷ এদিন থেকে হাসপাতালে আড়াইশো সিসিটিভি বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷

এদিন স্বাস্থ্য সচিব সাগর দত্তে পৌঁছলে তাকে ঘিরে বিক্ষোভ করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা৷ সেখানে পৌঁছন আর জি করের আন্দোলনরত চিকিৎসকরা৷

এদের অন্যতম অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘‘শুধু আর জি কর নয়, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ একসঙ্গে রয়েছে৷ সরকার তার প্রতিশ্রুতি মতো পদক্ষেপ নিক, নইলে আন্দোলন আরো তীব্র হবে৷ সাগর দত্ত মেডিক্যালের পাশাপাশি সব কলেজে আতঙ্কমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে, থ্রেট কালচার শেষ করতে হবে৷’’

শুক্রবার এই চিকিৎসকরা গণ কনভেনশনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রতিবাদের মধ্যেই এবারের দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হবে৷ ৩ অক্টোবর মহালয়ার দিন মহামিছিল আয়োজিত হবে৷ তার আগে ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আর জি করের ধর্ষণ ও খুনের মামলার শুনানি৷ সেদিনও পৃথক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে৷

এমনই প্রতিবাদের আবহে সাগর দত্তে আক্রমণের মুখে পড়লেন নারী চিকিৎসকরা৷ এই হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক মনোজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্যামেরার সামনে ও আড়ালে আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয় না৷ তাই দিনের পর দিন আমাদের পরিস্থিতির সঙ্গে আপোস করতে হয়৷ ২০১৯ সালে একবার সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছিল, কিছুদিন ঠিকঠাক চলার পর একই অবস্থা৷ এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে৷’’

হাসপাতালের নিরাপত্তা যেখানে ছিল, সেখানেই আছে: ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়

নার্সেস ইউনিটি-এর সাধারণ সম্পাদক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন,‘‘সুপ্রিম কোর্ট যতই নির্দেশিকা দিক, প্রশাসন যতই ভালো ভালো কথা বলুক, হাসপাতালের নিরাপত্তা যেখানে ছিল, সেখানেই আছে৷ নিরাপত্তারক্ষী, সিসিটিভি, গেট বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কাজ এখনো হয়নি৷ এটাই প্রমাণ করল সাগর দত্ত মেডিক্যালের ঘটনা৷ সব কলেজে একটা ঘটনা ঘটলে তারপর যদি পদক্ষেপ নেয়া হয় তা হলে মুশকিল৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান