1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফের সংঘাতের রাজনীতি?

৯ ডিসেম্বর ২০২২

আর মাত্র একদিন। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ। নয়াপল্টনে বুধবারের সংঘর্ষের পর আজ বিএনপি সংবাদ সম্মেলনে সেখানেই সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নয়া পল্টন নয়, যেকোনো খোলা মাঠে বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে।

https://p.dw.com/p/4KftN
বুধবারের সংঘাত ও একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ তিনটি মামলা করেছে
বুধবারের সংঘাত ও একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ তিনটি মামলা করেছেছবি: Abdul Halim

ফলে পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার ও বিএনপি। আর এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বুধবারের সংঘাতের পর বৃহস্পতিবার ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের উপস্থিতি ছিলো কম। নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে দুই দিকের আধা কিলোমিটার সড়ক পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বন্ধ রাখে। ওই সময়ে কোনো যান এবং জন চলাচাল বন্ধ ছিলো। সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেয়া হয়নি। বিকেলে বিএনপি কার্যালয়ের উল্টো দিকে এক দিকের রাস্তা খুলে দেয়। বিএনপি অফিসের দিকের রাস্তা এখনো বন্ধ আছে, বিএনপি কার্যালয়ও এখনো পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই আছে। দুপুরের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় কার্যালয়ে যেতে চাইলে তাকে বেশ দূরে নাইটিংগেল ক্রসিং-এ আটকে দেয়া হয়। এদিকে বুধবারের সংঘাত ও একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে।

মামলায় বিএনপির ৭৬ জন নেতা-কর্মীসহ মোট আসামি তিন হাজার। সারাদেশে বিশেষ অভিযানে বিএনপির নেতা-কর্মীদর আটক অব্যাহত আছে। নগরীতে এবং এবং প্রবেশ মুখে চেক পোস্ট বসিয়ে পুলিশ যানবাহনে তল্লাশি অব্যহত রেখেছে। পাড়ায় পাড়ায় আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ দল গড়ে তুলেছে।  এর মধ্যেই বিএনপির নেতা-কর্মীরাও  সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসছেন।  বিকেল পর্যন্ত নয়া পল্টনে পুলিশের ব্যারিকেডের বাইরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট মিছিল করার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ বার বারই তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঢাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে। ঢাকায় অতিরিক্ত রিজার্ভ ফোর্স আনা হয়েছে।

সমাবেশ নিয়ে মুখোমুখি সরকার ও বিএনপি:

বুধবারের ঘটনার পর বিএনপি বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে নয়া পল্টনেই সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, তারা যেকোনো উপায়ে নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপুর্ণ সমাবেশ করবেন।  তবে সরকার গ্রহণযোগ্য কোনো বিকল্প জায়গা দিলে তারা সেখানে সমাবেশ করতে পারেন, কিন্তু সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে তারা সমাবেশ করবে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,"১০ ডিসেম্বর আমরা সেখানে (নয়া পল্টন) যাব। এরপর জনগণই ঠিক করবে কী হবে। সরকারের বাধা বিপত্তি, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, পরিবহন ধর্মঘট, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলাসহ দমন-নিপীড়ন উপেক্ষা করে জনগণ এবং নেতা-কর্মী সমর্থকেরা এ সকল বিভাগীয় সমাবেশ সফল করে আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেন। ঢাকার সমাবেশও তারা সফল করবেন।”

বিএনপি অফিসে বোমা ও ককটেল পাওয়ার বিষয়টি নাটক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, "পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধারের নামে নাটক সাজায় ও মিথ্যাচার করে। আমার সামনেই পুলিশ সেখানে অসংখ্য বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শুধু পুলিশ নয়, পুলিশের সঙ্গে ডিবি, সোয়াট বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরাও এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে নিয়োজিত ছিল। এটা বিএনপির সমাবেশ পন্ড করার একটি ষড়যন্ত্র।”

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন,"নয়া পল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করে। তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়।  এতে ৪৯ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।”

দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি সমঝোতাহীন:নূর খান

তিনি বলেন," নয়া পল্টনে সড়কে তাদের সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তবে তারা উন্মুক্ত কোনো স্থানে সমাবেশ করতে পারে। পুলিশ বাধা দেবে না। তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।” আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন,"ঢাকায় আর কখনো রাস্তায় সমাবেশ হবেনা।”

এদিকে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার এক দলীয় সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বলেছেন,"চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে সরকার হটানো যাবে না। যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দিতে আসবে, সে হাত দিয়ে তাদের পোড়াতে হবে। ওদের কীসের ক্ষমা। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না। গণতন্ত্র তাদের মুখে মানায় না।”

সংঘাতের রাজনীতি কি ফিরে আসছে?

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতি সবচেয়ে সংঘাতময় ছিলো ২০১৩ এবং ১০১৪ সালে। ২০১৪ সালে বিএননি নির্বাচন বর্জন করে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলো। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে ২০১৩ সালে সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫০৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২২ হাজার ৪০৭ জন। ২০১৪ সালে ১৪৭ জন, ২০১৫ সালে ১৫৩ জন, ২০১৬ সালে ১৭৭ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে ৫৬ জন। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় শুধু আগুনে পুড়ে আহত হয়েছেন ৭৭৬ জন।

এরপর এক বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা কমতে থাকে। তবে ২০২১ সাল থেকে আবার বাড়তে শুরু করে। ২০২০ সালে নিহত হন ৩১ জন। ২০২১ সালে ১৫৭ জন।  আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ৬৪ জন রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন।

দেশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে: মনজিল মোরসেদ

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নূর খান মনে করেন,"দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি সমঝোতাহীন অবস্থায় চলছে। এক ধরনের অস্থিরতা আছে। আর গতকালের (বুধবার) ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারের অসহিষ্ণুতার প্রকাশ দেখেছি। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে রাজনীতিতে সংঘাত অনিবার্য। এখন দেশের যা অর্থনৈতিক অবস্থা তাতে এটা কেনোভাবেই কাম্য নয়। আমি আশা করছি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা অনুধাবন করবেন।”

আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন," নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে সরকার ও বিএনপির যে এখন অনঢ় অবস্থান তাতে সংঘাতের অশঙ্কাই দেখছি। সংঘাত তো শুরু হয়ে গেছে।  দেশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। দেশের এই অবস্থায় দুই দলেরই উচিত সমঝোতার পথ খোঁজা। তা না হলে আবার দেশের বাইরে আমাদের ইমেজ নষ্ট হবে।”

তার কথা,"দুই দলের রাজনীতিবিদরাই যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করছেন সেখান থেকেই রাজনীতি সংঘাতের দিকে এগিয়েছে। তারা সংযত ভাষায় কথা বললে হয়তো এই সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য