1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমাবেশের আগেই সংঘাত-প্রাণহানি, কী হবে ১০ ডিসেম্বর?

৭ ডিসেম্বর ২০২২

বিএনপির ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের আগেই পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠছে৷ বুধবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশর সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ চলাকালে একজন নিহত হয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/4Kc7s
বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের একটি মুহূর্ত
বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের একটি মুহূর্তছবি: Abdul Halim

সমাবেশের আগেই সংঘাত-প্রাণহানি, কী হবে ১০ ডিসেম্বর?

বিএনপির ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের আগেই পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠছে৷  বুধবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশর সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ চলাকালে একজন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন ৩০-৩৫ জন৷

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুইয়াসহ শতাধিক নেতা-কর্মীকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ও ভিতর থেকে পুলিশ আটক করেছে৷ কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে অভিযান চালায় পুলিশ৷

বুধবার সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে  বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়৷ তারা দুইটি ট্রাকে মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা ও শ্লোগান দিচ্ছিলেন৷  ধীরে ধীরে লোকজন বাড়তে থাকায় বিএনপি কার্যালয়ের দিকের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়৷ আগে থেকেই পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়৷  বিকেল তিনটার দিকে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে তাদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বললে তারা সমাবেশ চালিয়ে যেতে অনঢ় থাকে৷  পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিলে সংঘর্ষ হয়৷  পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়ে৷  পুলিশকে লক্ষ্য করেও পাল্টা ইট পাটকেল ছোড়া হয়৷  আধা ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে বিএনপি অফিসের কলাপসিবল গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে অভিযান চালায় পুলিশ৷ অভিযানের সময় পুলিশ সেখানে মারপিট ও আটক করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷  আর পুলিশ দাবি করেছে, তাদের ওপর হামলা চালানোর পর তারা ‘অ্যাকশন' এ যায়৷  পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যালয়ের সামনে গেলেও তাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ৷  তিনি সেখানেই রাস্তার উপরে অবস্থান নেন৷

পুলিশকে প্রহার
পুলিশকে প্রহারছবি: Abdul Halim

পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দাবি করেছেন, ‘‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিএনপি অফিসে ককটেল, লাটিসোটা ও চাল ডাল নিয়ে অবস্থান নেয়৷ তাই কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে৷''

আর যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার দাবি করেছেন, ‘‘বিএনপির কার্যালয়ে বোমা পাওয়া গেছে৷ তারা আগে পুলিশে ওপর হামলা চালায়৷''

পুলিশের ওপর হামলা
পুলিশের ওপর হামলাছবি: Abdul Halim

দমন পীড়নের সকল মাত্রা ছাড়িয়েছে সরকার

বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চলাকালে সেখানে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘সরকার দমন পীড়নের সকল মাত্রা ছাড়িয়েছে৷  এর চেয়ে নির্যাতন, দমন আর কিছু হতে পারে না৷  এটা সংবিধানের লঙ্ঘন, মানবাধিকারের লঙ্ঘন, গণতান্ত্রিক অধিকারের লঙ্ঘন৷  এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা ধারণা করছি ১০ তারিখের সমাবেশক পন্ড করার জন্য এটা করা হচ্ছে৷  এটা একটা চক্রান্ত৷  আমি কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ তুলে নেয়ার অনুরোধ করছি৷ শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে আমাদের সহযোগিতার অনুরোধ করছি৷''

‘এর চেয়ে নির্যাতন, দমন আর কিছু হতে পারে না’

আগেই রাজপথ গরম করতে চায় বিএনপি

এদিকে ঘটনার পর কক্সবাজারে এক সমাবেশে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘১০ তারিখের সমাবেশের আগেই মাঠ গরম করতে চায় বিএনপি৷  তারা অফিসে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছে৷  তারা সেখান থেকেই লাঠি নিয়ে মাঠে নামবে৷  ১০ তারিখ আসার আগেই তাই নয়া পল্টনে তাদের অফিসের সামনে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে৷''

অভিযান চলছে

বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে৷  এপর্যন্ত সারাদেশে ছয় হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিএনপি জানিয়েছে, তবে পুলিশের হিসেবে গ্রেপ্তার তিন হাজার৷  ঢাকায় এক হাজার ২২ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ৷  বুধবার ঢাকার কমলাপুর, গাবতলি বাসস্ট্যান্ডসহ ঢাকার প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ ও উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ৷ ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ দাবি করেছেন, ‘‘যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা মামলার আসামি৷''

‘বিএনপিকে কোনো সড়কে কোনোভাবেই সমাবেশ করতে দেয়া হবে না’

তবে বিএনপি নেতা মীর্জা আব্বাস বলেছেন,‘‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে রয়েছে৷ তাই আমাদের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে৷

সমাবেশ কোথায় হবে?

বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জায়গা এখনো অনিশ্চিত৷  ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের( ডিএমপি)  কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিং-এ বলেছেন, ‘‘বিএনপিকে নয়া পল্টন বা কোনো সড়কে কোনোভাবেই সমাবেশ করতে দেয়া হবে না৷  তারা সোহরাওয়ার্দি উদ্যান বা অন্য কোনো খোলা মাঠে সমাবেশ করতে হবে৷ তারা নয়া পল্টনে সমাবেশ করার কোনো উদ্যোগ নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘পল্টন বা তার আশপাশের রাস্তায় বিএনপিকে কোনো সমাবেশ করতে দেয়া হবেনা৷  পল্টনে ১০ লাখ লোক নিয়ে সমাবেশ করার জায়গা নেই৷  আমার প্রস্তাব তারা চাইলে মিরপুর কালশি মাঠে, টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ বা পূর্বাচলে বণিজ্য মেলা মাঠে যেতে পারেন৷''

এদিকে বিএনপি এখনো নয়া পল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনঢ় রয়েছে৷ অবশ্য বিকল্প হিসেবে তারা আরামবাগে সমাবেশের প্রস্তাব দিয়েছে৷  দুপুর দুইটার দিকে নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বৈঠকের পর ব্রিফিং-এ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস জানান, ‘‘আমরা বিকল্প হিসেবে আরামবাগ চেয়েছি৷  সেটা দেয়া না হলে আমরা নয়া পল্টনেই সমাবেশ করব৷''

তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ পুলিশের কাজ করবে, আমরা আমাদের কাজ করব৷  নয়া পল্টনে সমাবেশ করব৷  তবে আমরা চাই, পুলিশ যেন দলীয় ভূমিকা পালন না করে৷''

রাজধানী থমথমে

বিএনপি অফিসের সামনের ঘটনার পর ঢাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে৷ নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ টহল দিচ্ছে৷  তবে এরমধ্যেই সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার বাইরে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন৷