সমতার সম্পর্ক
২৫ মে ২০১৪মুশতাক খান তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের চারটি মডেল তুলে ধরেন৷ এর মধ্যে তিনটি মডেলকেই তিনি অসম্ভব এবং অবাস্তব বলে চিহ্নিত করেন৷ তাঁর কথায়, দু'দেশের সম্পর্ককে বাস্তব সম্মত উপায়ে সমতার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের তেমন কোনো ‘হোমওয়ার্ক' করা নেই৷ তাঁরা জানেন না, ভারত বাংলাদেশকে কতটুকু গুরুত্ব দেয় অথবা কী কারণেই বা গুরুত্ব দেবে৷ সম্পর্ক করতে চাইলেই যে হবে না৷ যার সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাই, সে আমাকে কী দৃষ্টিতে দেখে – তা ভালোভাবে বোঝা প্রয়োজন৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে নিয়ে নিরাপত্তার কোনো ভয় নেই ভারতের৷ ভয় আছে জনসংখ্যার হিসেবে৷ আরো সুনির্দষ্ট করে বললে, মুসলিম জনসংখ্যার বিষয়টি বলতে হয়৷ ভারত চায়, বাংলাদেশকে কাঁটাতারে বেড়ার মধ্যে বন্দি করে সম্পর্ক স্থাপন করতে৷ এছাড়া, তারা এদেশে তাদের নানা প্রয়োজনের নামে অবাধে বিচরণ করতে চায়৷''
ড. মুশতাক খান বলেন, ‘‘ভারত যদি বাংলাদেশকে ৫০ শতাংশ তিস্তার পানি দেয়, তবুও ট্রানজিট দেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়৷ এতে বাংলাদেশ ভারতের দাসে পরিণত হবে৷ এটা হবে বাংলাদেশের চরম বোকামি৷''
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে খুব চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে৷ অথচ বাংলাদেশের পণ্য সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না৷ কারণ অশুল্ক বাধার মাধ্যমে পণ্য আটকে দেয়া হয়৷''
বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র আয়োজিত এই সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক: প্রগতিশীল রাজনীতির চ্যালেঞ্জ'৷ ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. আহমেদ কামালের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে শিক্ষক, গবেষক এবং রাজনৈতিক কর্মীরা উস্থিত ছিলেন৷ তাঁদের প্রশ্নের জবাবও দেন অধ্যাপক ড. মুশতাক খান৷ তিনি নানা প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘অতীত ইতিহাস দেখলে এটা স্পষ্ট যে মুখে প্রগতিশীলতা বা অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলা হলেও, এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা একটা বড় বিষয়৷ আর তা না হলে দুই বাংলা এক থাকত৷ সেটা করা হয়নি৷ কারণ তাহলে ভোটের রাজনীতিতে দুই বাংলার নিয়ন্ত্রণ থাকত মুসলমানদের হাতে৷''
তাঁর বক্তব্য, ‘‘নারায়ণ মোদীর হিসাবও স্পষ্ট৷ তিনি ভোটের হিসাবে কোনো পরিবর্তন চান না৷ কংগ্রেসও এটা চায় না৷ তবে মোদী সেটা কোনো রাখ ঢাক না করেই প্রকাশ করেছেন৷ তাই তো বাংলাদেশি মুসলিম ‘অনুপ্রবেশকারী' নিয়ে তাঁর আপত্তি, বাংলাদেশি হিন্দুদের নিয়ে নয়৷''
ড. মুশতাক খান বলেন, ‘‘এইসব বিষয়ে সচেতন থেকে আমাদের ভারতের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে৷ প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ এবং কর্মীদের সচেতন থেকে প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷ নয়ত পরিস্থিতি এমন হবে যে তখন তা আর সামাল দেয়া যাবে না৷''
সভাপতির বক্তব্যে ড. আহমেদ কামাল বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ ছাড়া কোনো সম্পর্ক নেই৷ ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিটের নামে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে চাইছে৷ তারা বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় পণ্যে ভরিয়ে দিচ্ছে এবং বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সীমান্তে হত্যা করছে৷''
তাই তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রগতিশীলদের এগিয়ে আসতে হবে৷ তা না হলে দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা হবে না, বাংলাদেশের জনগণ ভারতের আগ্রাসন সম্পর্কে সচেতন হবে না৷''
হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা
দেবারতি গুহ