প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগ
২৩ এপ্রিল ২০২৩শুরু হবে বিভাগীয়-জেলা পর্যায়ের সমাবেশ। তার আগে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাকরে নেতাকর্মীদের শেষ মুহূর্তের নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। সব সময়ই আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি থাকে। এবার প্রধানমন্ত্রী ১৫ দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলে একটা বর্ধিত সভা হতে পারে। সেখানেও তিনি আমাদের নির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি নির্বাচনী সমাবেশ শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে ঈদের আগে নেতাকর্মীদের কিছু নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও কাজ শুরু করেছেন। আমরা রোজায় ও ঈদে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম। এখনও আছি। সামনেও থাকব। আমরা মানুষের মন জয় করেই আগামী নির্বাচনে ইনশাল্লাহ জয়লাভ করব।”
ঈদুল ফিতর ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েকদিন আগে নেতাকর্মীদের ‘হাফ ডজন' নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার ধানমন্ডির নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের এক যৌথ সভার পরে নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে এসব নির্দেশনা দেন তিনি। এসব নির্দেশনার মধ্যে আছে, বিরোধীদের সম্ভাব্য নাশকতার ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকা, ঈদের ছুটিতে নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করা, সরকারি প্রকল্পের উপকারভোগীদের খোঁজখবর এবং সরকারের উন্নয়নের চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরা, বিএনপির অপশাসন ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা এবং তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সময়ের তুলনা করে মানুষকে বোঝানো, স্থানীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের গ্রুপিং না করা এবং যাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা, কৃষকদের ধান কাটার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং উৎপাদন বাড়াতে অনাবাদি জমি না রাখতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।
এসব নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে অনুযায়ী সবাই কাজ শুরু করেছেন। এবার আমরা ইফতারি না করে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ইফতারির খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এলে আমরা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করব। যদিও এবার আমরা সবাই যে যার এলাকায় ঈদ করেছি। তারপরও প্রধানমন্ত্রী কোন এলাকায় জনসভা করলে সেই এলাকায় আদালা একটা উন্মাদনা তৈরী হয়। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী ফিরে আসার পর জনসভাগুলো শুরু করবেন। তখনই আমরা পুরোদমে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়ব।
আগামী মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও'র আমন্ত্রণে প্রথম যাবে টোকিও এরপর বিশ্ব ব্যাংকের আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন এবং রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে লন্ডনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৫ এপ্রিল থেকে এই সফর শুরু হয়ে আগামী ৯ মে ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রধানমন্ত্রীর ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেলেওতৃণমূল আওয়ামী লীগের বিভেদ এখনও দূর হয়নি।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুনে আমাদের এখানে পৌরসভার নির্বাচন রয়েছে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগে মনোনয়র পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। অথচ এই পদের জন্য আমরা যোগ্য বলে মনে করি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী দেওয়া হলে পাশ করতে অসুবিধা হবে না। সবাই তার পক্ষেই কাজ করবে। কিন্তু যদি জনবিচ্ছিন্ন কোন নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।”
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন খান নীলুও বলেছেন একই কথা। কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে তারা কাজ শুরু করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রোজা ও ঈদের সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন পেলে সবাই মিলে তাদের পক্ষে কাজ করবে বলে আশা করেন এই নেতা।