ইমরানকে কীভাবে সামলাবে যুক্তরাষ্ট্র!
২২ জুন ২০১৮যুক্তরাষ্ট্রে ইমরান খানের বড় পরিচিত একজন সমাজকর্মী হিসেবে৷ নিজের দেশে তিনি একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল পরিচালনা করেন৷ একজন ক্যারিশম্যাটিক চেহারার অসাধারণ সাবেক খেলোয়াড় হিসেবেও পশ্চিমা নারীদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়৷ কিন্তু এখনো ইমরান একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ওয়াশিংটনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি৷
মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে ডয়চে ভেলে জানতে চেয়েছিল, ইমরান প্রধানমন্ত্রী হলে তারা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চান কিনা৷ সরাসরি উত্তর না দিলেও, কূটনৈতিক জবাবেই মিলেছে আভাস৷
‘‘মার্কিন সরকার পাকিস্তানে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের পক্ষে৷ সে দেশের নাগরিকেরা যাঁকে নির্বাচিত করবেন, আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নতির লক্ষ্যে একই ধরনের এজেন্ডা নিয়ে তাঁর সাথেই কাজ করতে আমরা প্রস্তুত,’’ বলছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র৷
এই বক্তব্যই তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই দলের প্রধান ইমরান খান সম্পর্কে মার্কিন সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করে৷
ভুট্টো বা নওয়াজ শরিফের সাথে কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে কাজ করতে হয়, তা জানা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের৷ কিন্তু ইমরান খানের ক্ষেত্রে তা নয়৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তান ও ভারতে জঙ্গি কার্যক্রম ঠেকাতে ইমরানকে ওয়াশিংটনের সঙ্গেই কাজ করতে হবে৷
ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মার্কিন কূটনীতিক ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা প্রায়ই ইমরান খানের একটি কথা মনে করিয়ে দেন৷ ইমরান একবার বলেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা করতে আসা প্রতিটি মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করবেন৷
তাঁর এমন কথায় পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মধ্যেও ভয় ঢুকেছিল৷ জেনারেলরা ভাবছিলেন, ইমরান নির্বাচিত হলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে টানাপড়েন আরো জটিল পরিস্থিতিতে গড়াবে৷
সময় গড়াতে ইমরানও নিজের বক্তব্যে রাশ টেনেছেন৷ পরবর্তীতে পস্তাতে হবে না, এমন কথা বলার চেষ্টা করলেও মাঝেমধ্যেই মুখ ফসকে বেফাঁস কথাও বলে ফেলেছেন৷
উড্রো উইলসন সেন্টার ফর স্কলারসের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলমান বলছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চিন্তাটা খুব একটা সুখের নয়৷ কারণ, তিনি এবং তাঁর দল বরাবরই অ্যান্টি-অ্যামেরিকার ভূমিকা নিয়ে এসেছেন, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ঠিক উলটো৷’’
কুগেলমান মনে করেন, ‘‘একই সাথে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিশাল একটি ভূমিকা থাকে৷ ফলে, যদি সম্ভাব্য পিটিআইর সরকারও সুর নরম করতে বাধ্য হয়, তাতেও আমি আশ্চর্য হবো না৷’’
এই মাসের শুরুর দিকে আফিগানিস্তানে সাময়িক যুদ্ধবিরতির জন্য পাকিস্তানের সমর্থন প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের৷ কিন্তু সে সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ না করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি দেশটির সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে ফোন দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও৷
জেনারেল বাজওয়া শুধু মার্কিন অনুরোধই রাখেননি, কাবুলে গিয়ে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনাও করে এসেছেন৷
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেইন হাক্কানি বলছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র অন্য পাকিস্তানি নেতাদের যেভাবে সামলেছে, ইমরান খানও তার ব্যতিক্রম হবেন না৷’’
‘‘জুলফিকার আলী ভুট্টোও নির্বাচনের আগে মার্কিনবিরোধী ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ কিন্তু তিনিও নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেয়ার আগে রিচার্ড নিক্সনের সাথে দেখা করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে গিয়েছেন৷’’
তবে পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে বলে মনে করেন হাক্কানি৷
ফলে নির্বাচিত হলেও রাজনীতির পিচে ইমরান খানের ইনিংস কত দীর্ঘ হয়, তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে দেশের ভেতরে-বাইরের অন্য ‘খেলোয়াড়দের’ সমর্থনের ওপর৷
আনোয়ার ইকবাল/এডিকে