প্রকৃতিই যখন মঞ্চসজ্জার প্রেক্ষাপট
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭নারীর বিশাল দু'টি হাত উড়ন্ত তাস দিয়ে যুক্ত৷ কারমেনের মুক্তির সংগ্রামের এটাই প্রতীক৷ জর্জ বিসে-র অপেরায় ঊনবিংশ শতাব্দীর সেভিল শহরের এই দৃশ্য অস্ট্রিয়ার ব্রেগেনৎস শহরে ভাসমান মঞ্চে জীবন্ত হয়ে উঠছে৷
ব্রিটিশ মঞ্চশিল্পী এস ডেভলিন অনেককাল ধরে সঠিক মঞ্চসজ্জা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন৷ তারপর কনস্টানৎস হ্রদে তিনি এক বিশাল ভাস্কর্য সৃষ্টি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই হ্রদের প্রেক্ষাপটে ২০ বছর ধরে কাজ করা বিশাল দায়িত্বের কাজ৷ চারটি দৃশ্যের জন্য একটি আইডিয়া আঁকড়ে ধরে কাজ করতে হয়৷ চারটি ভিন্ন আইডিয়ার অডিশন করে একটি বেছে নিয়েছি৷ অনেক উৎকণ্ঠা ও বিনিদ্র রাত কেটেছে৷''
কারমেন এমন এক চরিত্র, সব পুরুষ যাকে ভালোবাসে৷ নিজের স্বাধীনতা বজায় রাখতে শেষ পর্যন্ত সে অবশ্য নিঃসঙ্গ থেকে যায়৷ ৫৯টি বিশালাকার তাস সেই মুহূর্তের প্রতীক তুলে ধরে, যখন কারমেন তার ভবিষ্যৎ দেখতে চায়৷ এস ডেভলিন বলেন, ‘‘এই মঞ্চে কারমেনই সঠিক নাটক, কারণ স্বাধীনতা বা বাতাস, নিয়তি ও পানির একটা টান অনুভব করা য়ায়৷ তাই আমাদের মনে হলো, এই সব তাস উপর ও নীচের টানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে৷''
মঞ্চসজ্জায় হ্রদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে শামিল করা তাঁর জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল৷ এস ডেভলিন মনে করেন, ‘‘নাটকের প্রথম পর্ব প্রকৃতির৷ সূর্যাস্ত বা পানি যা করছে, পাখি ও হাস যা করছে – সেই পর্ব তারই অংশ৷ বৃহত্তর এই মঞ্চ থেকে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করাই আমাদের কাজ৷ নাটক শুরু হওয়ার ২৫, ২৬, ২৭ মিনিট পর আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে ওঠে৷ তখন মঞ্চের প্রতি মনোযোগ অনেক বেড়ে যায়৷ তারপর পুরো অন্ধকার হয়ে যায়৷ প্রকৃতি থেকে শিল্পের কাছে হস্তান্তর ঘটে৷ সমসাময়িক পপ গায়ক হোক আর ঊনবিংশ শতাব্দীর অপেরা শিল্পীর লেখা গানই হোক, প্রক্রিয়াটা একই থাকে৷ গানের কথা পড়তে হয়, নিজের বোধশক্তি কাজে লাগিয়ে সেই গানের গল্প বলতে একটা পরিবেশ স্থির করতে হয়৷''
হ্রদের ধারে অপেরায় কাজ করে ব্যস্ত এই মঞ্চসজ্জা শিল্পী নতুন এক জগত আবিষ্কার করেছেন৷ এস ডেভলিন বলেন, ‘‘এতে সত্যি সবচেয়ে আনন্দ পাই৷ আমি এখানে পাকাপাকিভাবে থাকতে চলে আসবো৷ সেটাই ইচ্ছা৷ পাহাড়ের উপর বাড়ি তৈরি করবো, টিম এখানে নিয়ে আসবো৷''
‘কারমেন' ব্রেগেনৎস শহরে এস ডেভলিন-এর শেষ কাজ নয়৷ ২০শে আগস্ট পর্যন্ত বর্তমান মৌসুম চলবে৷ তারপর আবার পরের বছরের গ্রীষ্মে এই উৎসব ফিরে আসবে৷
গেয়ারহার্ড সনলাইটনার/এসবি