ক্রিস্টাল দিয়ে শিল্পসৃষ্টি
২ জুলাই ২০১৫অস্ট্রিয়ার অন্যতম প্রধান পর্যটক কেন্দ্র ‘ক্রিস্টাল ওয়ার্ল্ড'-এর নতুন আকর্ষণ কাও পেরো-র মেঘ৷ প্রায় ৩ কোটি ৪০ লক্ষ ইউরো ব্যয় করে সম্প্রতি সেটির সম্প্রসারণ করা হয়েছে৷ এর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে তথাকথিত সবুজ মাঠ৷ তার মাঝে রয়েছে বিস্ময় কামরা৷ বিশ্বখ্যাত সোয়ারভস্কি কোম্পানির শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে অস্ট্রিয়ার মাল্টিমিডিয়া শিল্পী আন্দ্রে হেলার এটি সৃষ্টি করেছিলেন৷
কাও ও পেরো বিস্ময় কামরা খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে তারপর ক্রিস্টাল মেঘের কাজ শুরু করেছিলেন৷ সাভিয়ের বলেন, ‘‘আমরা বিস্ময় কামরার মূল চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি, যা আসলে কল্পনার জগত৷ শুধু ঘরে নয়, বাইরেও৷''
ক্রিস্টাল মেঘ তৈরি করতে দুই বছর সময় লেগেছিল৷ মূল পরিকল্পনায় শুধু আউটলাইন স্থির করা হয়েছিল৷ তারপর কাও পেরো ও তাঁদের বিশাল টিম স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ শুরু করে৷ শিল্পীদের নির্দেশ অনুযায়ী ৩০ জন কর্মী সঠিক স্থানে ক্রিস্টাল লাগিয়েছিলেন৷
সাভিয়ের পেরো বলেন, ‘‘আমরা সবক'টি পথে হেঁটেছিলাম, ঘাসের লন পর্যন্ত৷ কোথা থেকে কোনটা কেমন দেখাচ্ছে, সেই অভিজ্ঞতা কেমন – তা জানতে চেয়েছিলাম৷ এভাবে নানা রকম রদবদল করতে করতে আমরা চূড়ান্ত অবস্থা সৃষ্টি করলাম৷''
অ্যান্ডি কাও বলেন, ‘‘প্রত্যেক প্রকল্পে নতুন কিছু করার তাগিদ থাকে৷ ভুল থেকেই শিখতে হয়৷ নিজের ‘ইনস্টিংক্ট' ও ‘ইনটিউশন'-এর উপর ভরসা করতে জানতে হয়৷ সেটাই আমাদের সঠিক পথে চালিত করে৷''
২০০৪ সালেই ক্যালিফোর্নিয়ার এই দুই শিল্পী মাছ ধরার তার ও টেক্সটাইল দিয়ে একটি ইনস্টলেশন তৈরি করেছিলেন৷ ক্যানাডায় তাঁরা একটি পার্কে বিশাল লণ্ঠন তৈরি করেছিলেন, যার মধ্যে থাকা যায়৷ ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদে বাতাসের ধাক্কায় নতুন ডিজাইন সৃষ্টির অভিনব আইডিয়াও তাঁদের মনেই আসে৷
সাভিয়ের পেরো বলেন, ‘‘সে কারণেই আমরা এগুলিকে পরিবেশ বলি – শুধু বাগান বা ল্যান্ডস্কেপ নয়৷ সামগ্রিক এই পরিবেশ ত্রিমাত্রিক বা ফোর-ডায়মেনশানের সব দিক তুলে ধরে৷ প্রতিটি মুহূর্ত, এমনকি আবহাওয়াও এর রূপ বদলে দেয়৷''
সম্প্রতি এই দুই শিল্পী ক্রিস্টাল দিয়ে ব্রিটেনের একটি ম্যানরের বারান্দায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন৷ অস্ট্রিয়ায় প্রায় ১ দশমিক ৩ হেক্টর এলাকায় স্ফটিকের মহিমা শোভা পাচ্ছে৷ প্রতি বছর সেখানে গোটা বিশ্ব থেকে প্রায় ১০ লক্ষ দর্শক আশা করা হচ্ছে৷ সাভিয়ের পেরো বলেন, ‘‘যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোনো দর্শক এর মধ্যে পাহাড়ের বদলে মরুভূমির বালুর স্তূপ দেখতে পাবেন৷ সমুদ্রতীরের মানুষ হয়ত ঢেউয়ের তরঙ্গ দেখবেন৷ অর্থাৎ একই সময়ে এর নানা রূপ থাকবে৷ মানুষ যা চায়, সেটা দেখার স্বাধীনতা থাকবে৷''
অ্যান্ডি কাও বলেন, ‘‘এবং নিজের জন্য একটা মুহূর্ত পাওয়া৷ বাগান তো আসলে পালানোর জায়গা!''
দুই শিল্পী এই ক্রিস্টাল মেঘের ভবিষ্যৎ বিবর্তন নিয়ে এখনই রোমাঞ্চ বোধ করছেন৷ বাতাস ও আবহাওয়া তাঁদের সৃষ্টি করা পাথর ও তারের চরিত্র ধীরে ধীরে বদলে দেবে৷ সেটাই তো রোমাঞ্চের কারণ৷