পোশাক কারখানায় শিশু হত্যা
২৭ জুলাই ২০১৬নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের ‘জোবেদা টেক্সটাইল মিল'-এর শ্রমিক সাগর বর্মণ নামের ১০ বছরের শিশুটিকে হত্যা করা হয় গত রবিবার৷ অভিযোগ, মিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজমুল হুদা নাকি পায়ু পথে বাতাস ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করে৷ পুলিশ অবশ্য ইতিমধ্যেই নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে৷
তবে মামলার আরো তিনজন আসামি কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার হারুন অর রশিদ, সিনিয়র প্রোডাকশন অফিসার আজাহার ইমাম সোহেল ও সহকারী প্রোডাকশন অফিসার রাশেদুল ইসলাম এখনও পলাতক আছেন৷ তারা এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে৷
সাগর তার বাবার সঙ্গে জোবেদা টেক্সটাইল মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো৷ তার মাসিক বেতন ছিল ৩, ৫০০ টাকা৷
সাগরের লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকৎসক ডা. এ কে এম শফিউজ্জামান জানান, ‘‘পায়ুপথে বাতাসের পাইপ ঢোকানোর কারণেই শিশু সাগর বর্মণের মৃত্যু হয়েছে৷ তার সমস্ত শরীর ফোলা ছিল৷''
পোশাক কারখানায় অমানবিক নির্যাতন
রূপগঞ্জ থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জসিমউদ্দিন জানান, ‘‘ঐ কারখানায় কর্মরত শিশু শ্রমিকদের নানা অজুহাতে মারধর করা হতো৷ কাজের অবহেলার অজুহাত দেখিয়ে চালানো হতো নির্যাতন৷''
মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিশু হত্যার ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় বাংলাদেশে শিশু হত্যা থামছে না৷ এর আগেও নির্মমভাবে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে৷ কিন্তু এ নিয়ে কয়েকদিন হইচই হয়েছে, তারপর সব শেষ৷''
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর রূপগঞ্জ থানার পুলিশ ঐ টেক্সটাইল কারাখানায় অভিযান চালিয়ে আরো ২৭টি শিশুকে উদ্ধার করেছে৷ এদের বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে৷ এরা সকলেই ঐ পোশাক কারখনার শ্রমিক বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, কারাখানাটি এখন বন্ধ রয়েছে৷ শিশু হত্যার পর অধিকাংশ শ্রমিক ও কর্মচারী কাজে যোগ দিচ্ছেন না৷
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও বন্ধ করা যায়নি
বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ৷ আর পোশাক কারাখানাগুলোতে শিশুশ্রম শুধু নিষিদ্ধই নয়, অপরাধ হিসেবেও গণ্য করা হয়৷ এ নিয়ে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ও দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছে৷ পোশাক কারাখানার মালিকরা শিশু শ্ম নেই বলে দাবি করলেও, রূপগঞ্জের ঘটনায় পোশাক কারাখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্টতই ধরা পড়েছে৷
এ প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘এখানে আইন আছে, প্রয়োগ নেই৷ আর আইন ভাঙলে শাস্তিও হয় না৷ ফলে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷''
প্রসঙ্গত, রূপগঞ্জের সাগরের মতো ২০১৫ সালের ৩রা আগস্ট খুলনায় ১২ বছরের শিশু রাকিব হাওলাদারকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়৷ সেই হত্যা মামলায় দু'জনের ফাঁসির হয়েছে৷
এ বিষয়ে আপনার মতামত লিখুন নীচের ঘরে৷