1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পূর্ব লাদাখে সেনা সরানো নিয়ে মতৈক্য

গৌতম হোড় নয়াদিল্লি
২৩ জুন ২০২০

পূর্ব লাদাখে বিরোধের জায়গা থেকে সেনা সরানোর ব্যাপারে একমত হলো ভারত ও চীন। ১১ ঘণ্টা ধরে লেফটানান্ট জেনারেল পর্যায়ে আলোচনার পর দুই দেশ এই মতৈক্যে পৌঁছেছে বলে ভারতীয় সেনা দাবি করেছে।

https://p.dw.com/p/3eDI2
ছবি: DW/S. Ghosh

কীভাবে সেনা সরানোর কাজ হবে, তা ঠিক করতে আবার আলোচনায় বসবে দুই দেশ। ভারতীয় সেনার তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ''আলোচনা ইতিবাচক, গঠনমূলক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে। সেনা সরানোর ব্যাপারে দুই পক্ষ একমত হয়েছে। পূর্ব লাদাখেরসব বিবাদিত এলাকা থেকে সেনা সরবে। কীভাবে সেনা সরানো হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা চলবে।'' ভারতের তরফ থেকে চীনকে আরেকটি কথা জানানো হয়েছে, সেনা সরানোর সময় যেন গালওয়ানের মতো ঘটনা না ঘটে।

সূত্র জানাচ্ছে, আলোচনায় ঠিক হয়েছে, গালওয়ান, প্যাংগং সো এবং ফিঙ্গার পয়েন্ট ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত এলাকায় সেনা সরানো হবে। এর আগে গত ৬ জুন গালওয়ানে সেনা সরানো নিয়ে মতৈক্য হয়েছিল। এ বার অন্য দুইটি বিতর্কিত এলাকা থেকেও সেনা সরানো নিয়ে মতৈক্য হলো বলে সূত্রের খবর। স্বাভাবিকভাবেই সেনা কর্তারা খুশি। 

সেনা সূত্র জানাচ্ছে, সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ পূর্ব লাদাখের চীনের এলাকা চুশুল সেক্টরের মলডোতে আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা শেষ হয় রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ। সেনা সরানোর বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হওয়ায় এত দেরি হয়েছে। ভারতের তরফ থেকে চীনকে এও জানানো হয়েছে যে, সরকারি সিদ্ধান্ত হলো, প্রয়োজন হলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় গুলি চালাতে দ্বিধা করবে না ভারতীয় সেনা।

তবে এ বার ভারতীয় পক্ষ যথেষ্ট সতর্ক। কারণ, গত ৬ জুনের বৈঠকেও সেনা সরানো নিয়ে মতৈক্য হয়েছিল। কিন্তু তারপর গালওয়ানে সংঘর্ষ হলো। তাই এ বার দুই পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনা হবে।

আরআইসি বৈঠক

রাশিয়ায় শুরু হয়েছে আরআইসি বৈঠক। আরআইসি মানে রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীনের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা। সেখানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং অংশ নিচ্ছেন। আর দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। সেখানে তিনি বলেছেন, ''আজকের চ্যালেঞ্জ কোনো একটি নীতি নিয়ে নয়, বরং পরীক্ষিত আন্তর্জাতিক নীতির রূপায়ণ নিয়ে। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, সহযোগী দেশের ন্যায্য স্বার্থ বজায় রেখে, জোটবদ্ধতায় বিশ্বাস রেখে সকলের ভালো করার চেষ্টা করা উচিত। এটাই একমাত্র পথ।'' নাম না করলেও এই কথাগুলো চীনের উদ্দেশে বলা, এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কোনও সংশয় নেই।

মোদীর কথা নিয়ে

একদম অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে ভূয়সী প্রশংসা পেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। সেটা হলো চীনের সংবাদমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। গ্লোবাল টাইমস যেমন মোদীর কথাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এর ফলে উত্তেজনা কমবে। গালওয়ান সংঘর্ষের গুরুত্ব মোদী কম করে দেখছেন বলেও তারা জানিয়েছে। ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিন মিনওয়াং দ্য হিন্দু পত্রিকাকে বলেছেন, মোদীর মন্তব্যের ফলে টেনশন কমবে। সামরিক বিশেষজ্ঞ ওয়া ডংশু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কথায় ভারতের সেনার মনোবল বাড়বে।

চীন ভারত যুদ্ধ, নাকি যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব?

কিন্তু দেশের ভিতর মোদীর সমালোচনা চলছে। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী মঙ্গলবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে তিনি মোদীর কড়া সমোলাচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ''চীন আমাদের ভূখণ্ড দখল করে বসে আছে। আর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দেশের ভূখন্ড কেউ অধিকার করেনি। কোনও পোস্টও দখল করেনি। এর ফলে সেনার সঙ্গে তিনি বিশ্বাসগাতকতা করেছেন। আমাদের অবস্থান দুর্বল করে দিয়েছেন। চীনকে কিছুতেই আমাদের জমির দখল নিতে যেতে দেওয়া হবে না।''

তৃণমূল সাংসদ ও রাজ্যসভার চিফ হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''২০১৩ সালেও চীন ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তখন আমি সংসদে এ নিয়ে প্রশ্ন করি। তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেোন এ কে অ্যান্টনি। তাঁর জবাব ছিল, চীন আমাদের কোনও ভূখণ্ড দখল করে নেই। এ বার প্রধানমন্ত্রীও তাই বললেন। তিনি এইভাবে না বললেই পারতেন। কূটনৈতিকভাবে তো অনেক কথাই বলা যায়। তাঁর উচিত ছিলো সেভাবে কথা বলা। তাছাড়া একটা মন্ত্রকের সঙ্গে আরেকটা মন্ত্রকের কোনও সমন্বয় নেই। তারা একেকরকম কথা বলছে।''

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এই মন্তব্য করার পর আর পিছনো যায় না। তাই এই ধরনের মন্তব্য করারই কোনও দরকার নেই।'' 

ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ মনে করেন, চীন নিয়ে নেহরুর মতো মোদীও একই ভুল করেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করলে দুই দেশের লোকের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হবে। সেটা হয়নি।