পুরোদস্তুর বাঙালি ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়
২৩ এপ্রিল ২০১১১৯২১ সালের দোসরা মে জন্মেছিলেন সত্যজিৎ রায়৷ বাংলা সিনেমাকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা দিয়ে তাঁর প্রয়াণ আজকের দিনেই ১৯৯২ সালে৷ ১৯৫০ সালে পথের পাঁচালি থেকে শুরু করে অপু ট্রিলজি এবং তারপর চারুলতা, ঘরে বাইরে, দেবী, অশনি সংকেত, অরণ্যের দিনরাত্রি কিংবা নায়কের মত আশ্চর্য আঙ্গিকের আর অভিনবত্বের সব ছবি৷ তাঁর শেষ ছবি আগন্তুক পর্যন্ত বাংলা সিনেমার পরিভাষাকে গোটা বিশ্বের সামনে এক নিজস্ব আঙ্গিকে বিন্যস্ত করেছিলেন তিনি৷ সেসব খবর সকলেই জানেন৷
সত্যজিতের দুরন্ত অনুরাগী আমরা বাঙালিরা, সেই সুদূর শৈশব থেকেই৷ তাঁর লেখার, তাঁর ছবির, তাঁর আঁকা অসামান্য সব ইলাস্ট্রেশনের৷ প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক, প্রকাশক সুকুমার রায়ের পুত্র সত্যজিৎ৷ তাঁর ঠাকুর্দা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী৷ বাংলা সাহিত্যকে এই পরিবার তাঁদের অসামান্য প্রতিভা দিয়ে সমৃদ্ধ করে এসেছে৷ সুকুমার রায়ই প্রথম সেই লেখক যিনি বাংলায় নিয়ে এসেছিলেন ননসেন্স হিউমার৷ আবোল তাবোলের যেসব চরিত্র বা ছড়া বাংলা ভাষার চিরকালীন সম্পদ৷ আর তাঁর সম্পাদিত সন্দেশ পত্রিকা বাংলা ভাষায় প্রথম শিশুপাঠ্যের রাজভোগ৷
এই রায় পরিবারের সন্তান সত্যজিৎ বা ডাকনামে মানিক পড়াশোনা শুরু করেছিলেন শান্তিনিকেতনে৷ পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য৷ তারপর তাঁর প্রতিভা তাঁকে নিয়ে যায় সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে৷ ১৯৫০ সালে প্রচুর সমস্যার পাহাড় পেরিয়ে তৈরি হল তাঁর চিরকালীন ক্ল্যাসিক ছবি পথের পাঁচালি৷ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বন করে সেই ছবির প্রসঙ্গে বলা হয়, এই গ্রহের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন একবার করে অন্তত দেখানো হয় সেই ছবি৷
ছবি বানানোর দক্ষতা তো অনস্বীকার্য৷ এর বাইরে গল্প লেখা, আঁকাতেও তাঁর হাত চলত সব্যসাচীর মত৷ বাঙালিকে তিনি দিয়েছেন প্রথম পুরোদস্তুর বাঙালিয়ানায় মোড়া এক গোয়েন্দা৷ যার নাম ফেলুদা, পোষাকি নাম প্রদোষ মিত্র৷ আর দিয়েছেন এক দারুণ অ্যাডভেঞ্চারাস বিজ্ঞানীর চরিত্র৷ নাম প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু৷ বা শুধুই প্রোফেসর শঙ্কু৷ অনাবিল ভাষায় বিজ্ঞানের জটিল সব বিষয় যে প্রোফেসর শঙ্কু তুলে ধরেন৷ তারপর একের পর এক অ্যাডভেঞ্চার ঘটে যায়৷
সত্যজিৎ রায় আসলে বাঙালির নিজস্বতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ তাঁর সৃষ্টি আর তাঁর অবদান শাশ্বত৷ তা সে মননেই হোক বা গ্রহণযোগ্যতায়৷ সেখানেই এই একশো শতাংশ বাঙালি মানুষটির বৈশিষ্ট্য৷ যা রসবোদ্ধার মনে পাকা আসন তৈরি করে নিয়েছে৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন