গুপী গায়েনের গান থেমে গেল, রয়ে গেল স্মৃতি
২৫ মে ২০১০আসল নাম তপেন চট্টোপাধ্যায়৷ তা, সে নামে কতজনই বা তাঁকে চিনত? সত্যজিত রায়ের ছবি গুপী গায়েন বাঘা বায়েন-এ নামভূমিকায় যখন তিনি প্রথমবার নেমেছিলেন তখন ভরা যৌবন৷ সেই শুরু৷ তারপর থেকেই তাঁর পরিচয় হয়ে গেল গুপী গায়েন৷ একটুখানি বলে রাখা ভালো তাঁর আগের পরিচয় এবং কাজকর্ম সম্পর্কে৷ মোটরগাড়ির এঞ্জিনিয়ার ছিলেন পেশাসূত্রে৷ রাজস্থানের চাকরি ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় ফিরে এলেন, সন্দেশ পত্রিকার দপ্তরে তাঁকে নিয়ে গেলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়৷ সত্যজিত রায় তার কিছুদিন পরেই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্প অবলম্বনে বানাচ্ছেন ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন৷' সে ছবিতে গুপীর চরিত্রের জন্য বেছে নিলেন তপেনকেই৷
বাকিটুকু ইতিহাস৷ সত্যজিতের পরিচালনায় এরপর ‘হীরক রাজার দেশে' এবং সত্যজিত পুত্র সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো৷' সব ছবিতেই গুপী এক এবং অনবদ্য হাসিমুখের তপেন চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর কণ্ঠে ছবিতে গুপীর গানগুলি সব সময়েই গেয়েছেন অনুপ ঘোষাল৷ গুপীর কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে নিজের গায়কীকেও পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন অনুপ ঘোষাল সেই ‘গুগাবাবা' থেকেই৷ তাই দুজনের পরিচয় এক স্রোতে এসে মিশে গিয়েছিল৷ যে স্রোত এক অন্য ভুবনের ঠিকানা৷ যে আসলে বলে দেয়, ‘দেখ রে নয়ন মেলে, জগতের বাহার, দিনের আলোয় ফোটে অন্ধকার৷'
ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন গুপী গায়েন৷ সোমবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার বাসভবনে অজ্ঞান হয়ে পড়েন৷ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় নার্সিং হোমে৷ সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকরা৷ মধ্য কলকাতায় নন্দন চত্বরে মঙ্গলবার দুপুর বারোটা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ শায়িত ছিল৷ অগণিত গুণগ্রাহী এসে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে গেছেন গুপী গায়েনকে৷
এই গুপী গায়েন আসলে সরল, সাদাসিধে একটি কল্পচরিত্র, যে কিনা হয়ে উঠেছিল শোষিত মানুষদের মুক্তির প্রতীক৷ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যে জনশিক্ষার কাজটা সত্যজিত করেছেন অত্যন্ত বলিষ্ঠ উপায়ে৷ আর সে কাজে গুপী গায়েনের কণ্ঠের সঙ্গীত দরিদ্র, আশাহত মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে৷ শোষণ আর অত্যাচারের দুর্বিপাক থেকে বারবার প্রতিষ্ঠা করেছে ন্যায় আর সাম্যের উজ্জ্বলতা৷ সেই উজ্জ্বলতাটুকু সব সবময়েই হয়ে উঠেছে গুপী গায়েনের হাসিমুখের প্রতীক৷
আর ঠিক এভাবেই গুপী গায়েন, থুড়ি তপেন চট্টোপাধ্যায় থেকে যাবেন বাঙালির বুকের খুব কাছের প্রিয়জনেদের একজন হয়ে৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন