পুরুষ থেকে নারীতে বদলে যাওয়া এক পাকিস্তানি
১৬ জুলাই ২০১৬স্কুলে যাওয়ার আগেই আলী রাজা বুঝেছিলেন তিনি আসলে একটি ভুল দেহে বড় হচ্ছেন৷ ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা, দৌঁড়ঝাপ ঠিক তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না৷ তাঁর বরং আগ্রহ ছিল পুতুল, অলংকার এবং মেক-আপ নিয়ে৷ তাঁর যখন পাঁচ বা ছ'বছর বয়স, মানে যখন সে কথা বলতে শেখেন, তখনি তিনি মাকে বলেছিলেন আচরণের এই ভিন্নতার কথা৷ মা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেননি৷ ‘‘তিনি মনে করেছিলেন, বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে এবং আমি পুরুষের মতোই আচরণ করবো'', বলেন আলী রাজা৷
আলী সেদিনের কথা স্মরণ করে এখনো হাসেন৷ পুরুষ আলী রাজাকে তিনি বহু আগেই বিসর্জন দিয়েছেন৷ বর্তমানে লাহোর থেকে বহুদূরে জার্মানির কোলনে তাঁর বাস, পড়ছেন পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে৷ তিনি এখন প্রকাশ্যে নারী হিসেবেই বসবাস করেন৷ মেকআপ নেন, সবসময় শেভ করে থাকেন৷ এমনকি তাঁর হাঁটাচলা, কথা বলা –সবই নারীর মতো৷
শুধু তাঁর দেহটাই এখনো পুরুষের রয়ে গেছে৷ তবে সেটাও খুব তাড়াতাড়ি পুরাপুরি বদলে ফেবতে চান রেজা৷ বর্তমানে নিজেকে আলিয়া পরিচয় দেয়া রেজা বলেন, ‘‘আমি ইতোমধ্যে হরমোন নিতে শুরু করেছি৷ এবং আশা করছি, আগামী দু'বছরের মধ্যে একটা অস্ত্রপচারও হয়ে যাবে৷'' হাসিমুখেই এ কথা জানালেন আলিয়া৷ নিজের দেহটাকে পুরোপুরি নারী করে নিতে অধীরে আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন তিনি৷
তবে নিজের নারী পরিচয়ের ব্যাপারটা পুরোপুরি তাঁর পরিবারকে জানাতে বহুদিন ইতস্তত করেছেন আলিয়া৷ তিনি মনে করেছিলেন, মাকে জানালে মা হয়ত তাঁকে ত্যাজ্য করবেন৷ কিন্তু হয়েছে উল্টোটা৷ তাঁর মা বিষয়টি মনে নিয়েছেন৷
পাকিস্তানে অবস্য সবার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না৷ বরং পাকিস্তানে হিজড়াদের জীবন অনেক দুর্বিষহ৷ অধিকাংশক্ষেত্রে তাঁদের একমাত্র পেশা হয়ে ওঠে বিভিন্ন উৎসবে গান গাওয়া আর নাচা৷ সমাজের মূলধারায় তাঁদের কোনো স্থান হয় না৷ এইতো কয়েক সপ্তাহে আগে ২৩ বছর বয়সি পাকিস্তানি অ্যাক্টিভিস্ট আলিসাকে হত্যা করা হয়, যিনি হিজড়াদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট ছিলেন৷ তাঁকে নয়বার গুলি করা হয়েছিল৷ মুমূর্ষু অবস্থায় আলিসাকে যখন হাসপাতালে নেয়া হয়, তখন চিকিৎসকরা তাঁকে চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করছিল৷ তিনি নারী না পুরুষ সেটা নির্ধারণ তাদের কাছে তখন মূখ্য হয়ে উঠেছিল৷
মুসলিম প্রধান পাকিস্তানে হিজড়াদের উপর নির্যাতনের মাত্রা পরিসংখ্যান ঘাটলে পরিষ্কার হয়ে ওঠে৷ গতবছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাস, অর্থাৎ মাত্র ১৬ মাসে, শুধু খাইবার পাকতুনখা প্রদেশেই নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনশ'র মতো হিজড়া, আর খুন হয়েছেন ৪৬ জন৷
আলিয়া অবশ্য কখনো শারীরিকভাবে আক্রান্ত হননি৷ তবে হিজড়াদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাবের বিষয়টি তিনি জার্মানিতেও টের পেয়েছেন৷ অনেকেই তাঁর দিকে বাকা চোখে তাকিয়েছে, এমনকি শিশুরা তাকে নিয়ে কানাঘুষা করতেও দেখেছেন তিনি৷ একদিন এক মাতাল তাঁকে বলেছে, ভারতে ফিরে যেতে৷ আলিয়া মনে করেন, সমাজে হিজড়াদের প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তাঁদের সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করতে হবে, তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে৷ এবং সেটা জার্মানি এবং পাকিস্তান – উভয় দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷