পাক-সীমান্তে পৌঁছে গেল তালেবান
১৫ জুলাই ২০২১মার্কিন সেনা এখনো পুরোপুরি চলে যায়নি। তারমধ্যেই আফগানিস্তান দখলের পথে আরো এক ধাপ এগলো তালেবান। আফগান সেনা এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য, পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বুধবার দখল করে নিয়েছে তালেবান। এর ফলে দেশের প্রায় প্রতিটি সীমান্ত অঞ্চলেই নিজেদের আধিপত্য তৈরি করল তালেবান।
বুধবার সবার প্রথম তালেবানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কান্দাহারের ওয়েশ অঞ্চল তাদের দখলে এসেছে। তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, স্পিন বোলডাক এবং চামানের মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চল এখন তাদের কব্জায়। কান্দাহারের কাস্টমসও মুজাহিদরা দখল করে নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই সীমান্ত অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সীমান্ত ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানে ঢোকার ক্ষেত্রেও এই সীমান্তটি গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে ইরান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলও দখল করেছে তালেবান। ফলে বলাই যায়, আফগানিস্তানের স্থলসীমান্তের একটি বড় অংশ এখন তালেবানের হাতে।
নামপ্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে আফগান সেনার এক অফিসার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তালেবান যে দাবি করছে, তা সত্য। শয়ে শয়ে সেনা কম্যান্ডো ওই সীমান্তে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পন করেছে। সংবাদসংস্থা এএফপি-কে পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, ওই সীমান্তে আফগানিস্তানের পতাকা নামিয়ে তালেবান পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে মুজাহিদরা। তবে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি। তারা জানিয়েছে, খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সংবাদসংস্থা সিএনএন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, অসংখ্য সেনা কম্যান্ডো তালেবানের কাছে আত্মসমর্পন করছে এবং তালেবান তাদের গুলি করে হত্যা করছে। যদিও ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করা হয়নি। সংবাদমাধ্যমের দাবি গত ১৬ জুন দৌলতাবাদ অঞ্চলে এ ঘটনা ঘটেছে। তালেবানও অবশ্য ভিডিও-র সত্যতা স্বীকার করেনি। বরং তাদের দাবি, ভুল ছবি দেখাচ্ছে মার্কিন গণমাধ্যম।
আফগানিস্তানে প্রথম সৈন্য পাঠিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ। বুধবার তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যে ভাবে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তিনি তার সঙ্গে সহমত নন। এর ফলে আফগান নারী এবং শিশুরা ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়বেন বলে বুশের অভিমত। সকলকে ধরে ধরে মারা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বুশ।
রাশিয়াও তালেবানকে চরম বার্তা দিয়েছে। যে ভাবে তালেবান দেশের সীমান্ত দখলে নিচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাশিয়া। তালেবান প্রতিনিধি দল অবশ্য আগেই রাশিয়ায় গিয়ে বৈঠক করে এসেছিল। বলা হয়েছিল, আফগানিস্তানে তালেবান এমন কিছু করবে না, যাতে রাশিয়ার ক্ষতি হয়।
মার্কিন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এরমধ্যেই দেশের এক-তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়েছে তালেবান। যে গতিতে তারা এগোচ্ছে, তাতে এ বছরের শেষের মধ্যে গোটা দেশ তাদের পক্ষে কব্জা করে ফেলা সম্ভব।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)