পাকিস্তানকে কেন অবিশ্বাস করছে আফগানিস্তান?
১১ জুলাই ২০২১আফগানিস্তানের বর্তমান অস্থিরতার জন্য আফগান সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ দায়ী করছে পাকিস্তানকে৷ তাদের মত, পাকিস্তানের প্রচ্ছন্ন তালেবান সমর্থন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আবহে অস্থিরতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে৷
অবশ্য এই অভিযোগ নতুন নয়৷ আফগান সরকারের পক্ষেও শোনা গেছে এই অভিযোগ যে পাকিস্তান তালেবান গোষ্ঠীদের আশ্রয় ও সামরিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ দুই দশক দীর্ঘ মার্কিন সেনা অবস্থানের শেষে নতুন করে আলোচনায় এই বিষয়টি৷
এক আফগান রাজনীতিক আবদুল সাত্তার হুসেইনি সম্প্রতি একটি টিভি শোতে বলেন, ‘‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে আমরা পাকিস্তানের হাতে আক্রান্ত৷ আমরা শুধু তালেবানের বিরুদ্ধে লড়ছি না, আমরা পাকিস্তানের সাথে এই মেকি যুদ্ধেও জড়িত৷ তালেবানদের আফগানিস্তানের জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই, আর আমরাও পাকিস্তানের উদ্দেশ্য মেনে নিতে নারাজ৷’’
অস্বস্তির সম্পর্ক
পাকিস্তান এই সব অভিযোগকে সাধারণত উড়িয়ে দিয়ে থাকে, যদিও তা আফগানরা সহজভাবে নেয় না৷
গত মাসে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি একটি আফগান টিভি শোতে উপস্থিত হন এই অস্বস্তির সম্পর্কে কিছুটা স্বস্তি আনতে৷ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সেখানে প্রশ্ন করেন পাকিস্তানে কিছু তালেবান নেতাদের অবস্তান করা প্রসঙ্গে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে তিনি এবিষয়ে অবগত নন৷
মন্ত্রী বারবার উপস্থাপককে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, কিন্তু উপস্থাপকের সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অনুষ্ঠানে প্রায়ই পাকিস্তানের একটি নেতিবাচক রূপ তুলে ধরা হয়৷
কাবুলের সাংবাদিক শারিফ হাসানিয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আফগান-পাক সম্পর্ক চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এমন থেকেছে৷ বেশিরভাগ আফগানরাই পাকিস্তানকে নেতিবাচকভাবে দেখে কারণ নব্বইয়ের দশকে ইসলামাবাদ তালেবান ও মুজাহিদিনকে সমর্থন করেছিল৷’’
কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাজিবুল্লাহ আজাদ মনে করেন যে আফগান ধারণা সত্যের ওপর ভিত্তি করেই গড়া৷
তিনি বলেন, ‘‘পাক কর্তৃপক্ষ আফগান বিশেষজ্ঞদের কিছু অভিযোগ স্বীকার করেছে৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তারা তালেবানকে সমর্থন করেন৷ ২০১৫ সালে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যিনি সেই সময় বিরোধী দলে ছিলেন, বলেন যে তার হাসপাতালে এক আহত তালেবান যোদ্ধার চিকিৎসা হয়েছিল৷ সম্প্রতি পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রাশিদ বলেন যে তালেবান সদস্যদের পরিবার পাকিস্তানে রয়েছে৷’’
উন্নত সম্পর্কের সম্ভাবনা
যেহেতু এই দুই দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার প্রভাব দুই দেশের মধ্যে বড় ভূমিকা রাখে, সেক্ষেত্রে মার্কিন সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের ফলাফলও এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে৷
হাসানিয়ার এবিষয়ে বলেন, ‘‘সুশীল সমাজের সদস্যরা ও সাংবাদিকরা যতই চেষ্টা করুন না কেন দুই দেশের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে, এই কাজ আসলে সরকারের৷ গত কয়েক মাসে উচ্চপদস্থ আফগান কর্তারা পাকিস্তানে গিয়েছেন, কিন্তু মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি৷ যদি এই অবস্থা বদলাতে হয় তাহলে পাকিস্তানকে সশস্ত্র গোষ্ঠীদের মদত দেওয়া বন্ধ করতে হবে৷’’
এদিকে পাক কর্মকর্তাদের মত, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতি করতে হলে কাবুলকে এই ধরনের অভিযোগ আনা বন্ধ করতে হবে৷
শামিল শামস, মাসুদ সাইফুল্লাহ/এসএস