ক্ষতি ৬০০ কোটি টাকা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩গত ২১শে সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমিক সমাবেশের দিন থেকে ঢাকা এবং তার আশেপাশের গার্মেন্টসগুলোতে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শুরু হয় শ্রমিক বিক্ষোভ৷ শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি ভাঙচুরের কারণে বিভিন্ন এলাকায় কারখানা বন্ধ করে দেন মালিকেরা৷ বিজিএমইএ জানায়, ২১শে সেপ্টেম্বর সমাবেশের জন্য ছুটি দেয়া হয় প্রায় দুই হাজার পোশাক কারখানায়৷ বিক্ষোভের কারণে ২২শে সেপ্টেম্বর ১৪০টি, ২৩শে সেপ্টেম্বর ৫৫০টি, ২৪শে সেপ্টেম্বর ৯০টি, ২৫শে সেপ্টেম্বর ১৬০টি এবং ২৬শে সেপ্টেম্বর অন্ততপক্ষে ৪০টি গার্মেন্টস বন্ধ রাখা হয়৷
বিজিএমইএ-র সহসভাপতি এস এ মান্নান কচি ডয়চে ভেলেকে জানান, এর ফলে তাত্ক্ষণিকভাবে মোট ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন বন্ধ রাখা পোশাক কারখানার মালিকরা৷ তিনি জানান, যদি এ অবস্থা অব্যাহত থাকে তাতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে৷ পোশাক সরবারাহ ঠিক সময়ে করতে না পারলে ক্রেতারাও নেবে মুখ ফিরিয়ে৷
ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ইকতেদার আহমেদ বলেন, তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুন এবং রানা প্লাজা ধসের পর এমনিতেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প চাপের মুখে আছে৷ তারপর যদি এই শ্রমিক অসন্তোষ অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আরো বড় ধরণের ভাবমূর্তির সংকটে পড়বে৷ তাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ তিনি বলেন, এটা কোনো জেদের ব্যাপার নয়৷ শ্রমিককে তার ন্যায্য মজুরি দিতে হবে৷ তাই শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব যৌক্তিক ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা উচিত৷
তিনি অবশ্য একথাও বলেন যে, এ জন্য শ্রমিকদেরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে৷ ভাঙচুর করে শিল্পের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই৷ তাই নিয়মতান্ত্রিক পথেই শ্রমিকদের দাবি দাওয়া আদায় করতে হবে৷
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, মালিকদের দায়িত্বহীনতার কারণেই শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়েছে৷ পোশাক শিল্পের কোনো ক্ষতি শ্রমিকরা চান না৷ তবে মালিকদের মনে রাখতে হবে যে শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি না দিলে তাঁরা ঠিকমতো কাজ করতে পারবেন না৷ তাই তিনিও দ্রুত ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার অনুরোধ করেন৷
এদিকে, টানা পাঁচ দিন শ্রমিক অসন্তোষের পর শুক্রবার ছুটির দিনে কোথায় কোথাও পোশাক কারখানায় কাজ হয়েছে৷ ভাঙচুরেরও কোনো খবর পাওয়া যায়নি৷ পোশাক শিল্প এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ পোশাক শ্রমিকরা বলেছেন যে, তাঁরা কাজ করতে চান৷ তবে তাঁদেরও ভালো থাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷ ওদিকে, কয়েকজন মালিক দাবি করেছেন ন্যূনতম মজুরি ৮,০০০ টাকা করা হলে তাঁদের হয় শ্রমিক ছাঁটাই করতে হবে অথবা ক্রেতাদের বেশি দাম দিতে হবে৷
উল্লেখ্য, মালিকরা ন্যূনতম মজুরি মাত্র ৬০০ টাকা বাড়িয়ে ৩,৬০০ টাকা করার কথা বলছেন৷ অথচ ৩,০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি করা হয়েছিল সেই ২০১০ সালে৷