পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নের সামনে ডিএ নিয়ে বিক্ষোভ
হাইকোর্টের অনুমতিতে এবার পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন ডিএ নিয়ে আন্দোলনকারীরা। পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা।
হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে
কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে সরকরি কর্মচারী, শিক্ষক, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার কর্মী সংগঠনগুলিকে নিয়ে গঠিত যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যরা একেবারে নবান্নর কাছে বকেয়া ডিএ অবিলম্বে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন। নবান্ন হলো রাজ্য সচিবালয়। মুখ্যমন্ত্রীর অফিসও এখানেই। এতদিন শহিদ মিনারে বিক্ষোভ দেখালেও মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের সামনে এসে এই প্রথমবার বিক্ষোভ দেখানো হলো।
মাঝরাত থেকে উত্তেজনা
নবান্নের সামনে বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ দেখানোর কথা ছিল তাদের। কিন্তু যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা পৌঁছালে পুলিশ তাদের সেখানে বসতে দেয়নি। এনিয়ে সারারাত ধরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। সকালে তাদের বিক্ষোভের জন্য একটা জায়গা সাময়িকভাবে পুলিশ দেয়।
হাইকোর্টে আবেদন
বিক্ষোভকারীদের নবান্নের সামনে বসে বিক্ষোভ দেখানোর অনুমতি দেয় বিচারপতি রাজকুমার মান্থার বেঞ্চ। রাজ্য সরকারের তরফে শুক্রবার ওই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানানো হয়। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, শনিবার বিকেল পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ দেখানো যাবে। তারপর বিক্ষোভকারীদের চলে যেতে হবে।
আপত্তি নেই বিক্ষোভকারীদের
হাউকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশেও খুশি বিক্ষোভকারীরা। তারা যে নবান্নের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে পারছেন সেটাকেই জয় হিসাবে দেখছেন তারা। এইখানে বিক্ষোভ দেখানোর জায়গা পেতেই তো তাদের মাঝরাত থেকে পুলিশের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন।
প্রচুর পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী
নবান্ন ঘিরে ও তার আশপাশে প্রচুর পুলিশ ও দাঙ্গারোধী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তার বলয়ে চারপাশ মুড়ে ফেলা হয়েছে।
বিক্ষোভকারী সন্দীপ ঘোষের বক্তব্য
আন্দোলনকারীদের নেতা সন্দীপ ঘোষ বলেছেন, ''পুলিশ ও প্রশাসন সকালেও মাইক লাগাতে, প্যান্ডেল করতে বাধা দিয়েছে। আমাদের মূল দাবি তিনটি। পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক ও সরকারি কর্মীদের পুরো বকেয়া ডিএ দিতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নয়, স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করতে হবে। টাকা বিনিময়ে নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি দিতে হবে।''
'সরকার কেন কথা শুনছে না?'
বিক্ষোভকারী সুবর্ণা চক্রবর্তী বলেছেন, ''আমাদের কথা শুনতে সরকারের কেউ এল না। আলোচনা করল না। তাই নবান্নে আমাদের দাবি পৌঁছানোর জন্য এখানে এসেছি। চল্লিশ শতাংশ ডিএ-র দাবিতে লড়াই চলবে।''
'আমরা সংযত থেকেছি'
বিক্ষোভকারী মহুয়া লাহা জানিয়েছেন, ''ন্যায্য অর্থ দাবি করতে বসেছি। অন্য দাবিও আছে। বারবার সরকার আমাদের হাইকোর্টে যেতে বাধ্য করছে। সরকারের সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। নবান্নের সামনে পুলিশ হেনস্থা করেছে। পুলিশ উসকানি দিয়েছে। আমরা সংযত থেকেছি।''
ডিএ কত বাকি?
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ কতটা? আন্দোলনকারীদের দাবি, ৩৬ শতাংশের মতো। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, বকেয়া ডিএ মেটাতে খরচ হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ রাজ্য সরকারের পক্ষে খরচ করা সম্ভব নয়। তাই যতটা সম্ভব, সরকার ততটা ডিএ বাড়াচ্ছে।
দুই দফায় ডিএ বাড়ানো হয়েছে
বৃহস্পতিবারই রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, তারা চার শতাংশ ডিএ বাড়াচ্ছে। এটা সরকারি কর্মীদের বড়দিনের উপহার। জানুয়ারি মাস থেকে এই বর্ধিত হাতে ডিএ চালু হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই ডিএ বাড়ানো বাধ্যতামূলক নয়,ঐচ্ছিক। এর আগে বাজেটের সময় চার শতাংশ ডিএ বাড়ানো হয়েছিল। সরকারি কর্মীরা আন্দোলনে নামার পর দুই দফায় আট শতাংশ ডিএ বাড়িয়েছে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় সরকার।
খারিজ করলো বিক্ষোভকারীরা
বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাদের পুরো বকেয়া ডিএ দিতে হবে। এই সামান্য বৃদ্ধিতে তারা খুশি নন। তারা তাদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমেছেন। মাসের পর মাস ধরে শহিদ মিনারের কাছে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এইটুকু ডিএ বাড়িয়ে তাদের সমস্যার সমাধান হবে না। বিজেপি-র বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের সমান ডিএ দিতে হবে। লোকসভা ভোটের আগে সামান্য ডিএ বাড়িয়ে সরকার মুখরক্ষা করতে চায়।
পুরনো দাবি
সরকারি কর্মীদের ডিএ বাড়ানোর দাবি নিয়ে প্রথম বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা ও বিধাননগরের সাবেক মেয়র সব্যসাচী দত্ত। তিনি অবশ্য বিদ্যুৎকর্মীদের ডিএ বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। পরে চাপের মুখে যখন মেয়র পদ ছাড়তে হয়, তখনো তিনি এই দাবি করেন। মুকুল রায়ের এই অনুগামী পরে দল ছাড়েন। আবার কিছুদিন পরে তৃণমূলে ফিরে আসেন।
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ তৈরি
২০২২ সালের জুনে রাজ্য সরকারি কর্মী, শিক্ষক ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কর্মীদের ২০টি সংস্থা মিলে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তলায় এসে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই মঞ্চের নেতাদের দাবি, পরে আরো অনেক সংস্থা তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে ৬২টি সংস্থা রয়েছে বলে তাদের দাবি।
রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ
এরপর শহিদ মিনারের কাছে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সরকারি কর্মীরা। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তারা শিক্ষক আন্দোলকেও সমর্থন করেছেন। তারা ধর্মঘটের ডাকও দিয়েছিলেন।
হাইকোর্টের নির্দেশ
২০২২-এর অগাস্টে কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, তিন মাসের মধ্যে রাড্য সরকারকে ডিএ দিতে হবে। রাজ্য সরকার বলে, তাদের কাছে ওই পরিমাণ অর্থ নেই। সেই সময়সীমা বেড়ে হয় ৪ নভেম্বর। কিন্তু রাজ্য সরকার তার মধ্যে ডিএ দিতে পারেনি। বছরশেষে চার শতাংশ ডিএ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বকেয়া ডিএ-র দাবিতে বিক্ষোভ চলছে।